র‌্যাবের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আদালতের

নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে র‌্যাব যে তদন্ত করছে, তার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2014, 01:48 PM
Updated : 4 June 2014, 01:51 PM

বুধবার র‌্যাবের তদন্তের অগ্রগতির প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর এই প্রশ্ন তোলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত থেকে র‌্যাবকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আদালতের নির্দেশে গঠিত প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় প্রতিবেদনও এদিন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে ডিবি ও সিআইডিরটিসহ মোট চারটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।   

আদালত আগামী ৯ জুলাই এই বিষয়ক শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করেছে। এর আগে যদি তদন্ত শেষ হয়ে যায় তাহলে তা আদালতেকে জানাতে বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের নিরাপত্তা দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিন সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা হত্যায় জড়িত বলে কোনো কথা এই অগ্রগতি প্রতিবেদনে তিনি পাননি।

হাই কোর্টে শুনানির দিনই গ্রেপ্তার সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তার একজন আরিফ হোসেন নারায়ণগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনের লাশ গত ৩০ এপ্রিল নদী থেকে উদ্ধারের পর র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে হাই কোর্টের এই বেঞ্চ তা তদন্তের নির্দেশ দেয়।

লাশ উদ্ধারের স্থান

আদালত প্রশাসনিক একটি কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে সহায়তা করতে বলা হয় সিআইডিকে।

র‌্যাবকে হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে বারণ করলেও সদস্যদের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

এই ঘটনায় বড় ধরনের হেরফের যেন না হয়, সেজন্যই একাধিক তদন্ত করা হচ্ছে বলে যুক্তি দেখায় আদালত।

“মামলার তদন্ত করছে ডিবি। তারাই তদন্ত করবে। সাক্ষ্য-প্রমাণ তাদের নিকটই থাকবে। বাকিদের তদন্তে কারো বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ পাওয়া গেলে সেটা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেবে।”

“আমরা সিআইডিকে তদন্ত করতে বলেছি। তবে মূল তদন্তে ব্যাঘাত না করে সেটা করতে হবে। একাধিক তদন্ত হলে একটার সঙ্গে অন্যটার ১৯-২০ হতে পারে। ১৫-২০ হতে পারে না। ১৫-২০ ঠেকাতেই আমরা একাধিক তদন্ত করতে বলেছি।”

জড়িত কেই যেন ছাড় না পায়, সেজন্যই একাধিক তদন্ত বলে আদালত জানায়।

র‌্যাব তাদের প্রতিবেদনে জানায়, হাই কোর্টের আদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে তারা তদন্ত করছে। মোট ৫৬ জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বক্তব্য ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত শেষ পর্যায়ে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন র‌্যাবের কোনো সদস্য জড়িত কি-না, সেই তদন্ত শুরু হয়েছে।

“এ জন্য বাইরের লোকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন হতে পারে। ইতোমধ্যে ৬ জনকে নোটিস দেয়া হয়েছে।”

গ্রেপ্তার র‌্যাব সদস্য তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন

আদালত প্রশ্ন তোলে- “১৬১ ধারা কেন এল? আপনারা কি হত্যা মামলার তদন্ত করছেন? মামলা ছাড়া তো জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা যায় না।”

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “কারো যদি অপরাধ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে যেন পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা না লাগে সেজন্য হয়ত তারা এটা করেছে।”

আদালত বলে, “না, এটা তারা করতে পারে না। এ রকম কিছু পেলে তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানাবে। তদন্ত কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন।”

সাত খুনের এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন নারায়ণগঞ্জ ডিবির ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল।

সব প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত আগামী ৯ জুলাই পরবর্তী শুনানির জন্য রাখে। আদালত বলেছে, এর মধ্যে কারো তদন্ত শেষ হয়ে গেলে ফাইন্ডিংস ও সুপারিশসহ আদালতে জমা দিতে হবে।