ঢাকঢোল পিটিয়ে শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা সমস্যা সম্পর্কে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সচেতন করার বিশেষ দিন ৩১ মে।
Published : 31 May 2014, 05:18 PM
আমাদের দেশে কয়েকটি জেলায় তামাকের চাষ হয়। এখন দিন দিন এ চাষের জমির আয়তন বাড়ছে। বিস্তৃত হচ্ছে ভৌগলিক এলাকা।
অভিযোগ রয়েছে, তামাক বিরোধী সচেতনতার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত সংশ্লিষ্টরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই প্রচলিত শস্য উৎপাদনে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না।
অপরদিকে তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করছে, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছে, তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
ফরিদপুর এমন একটি জেলা যেখানে তামাকের চাষ বাড়ছে দিন দিন। স্বাভাবিকভাবে এলাকার নারী-পুরুষ-শিশু তামাক চাষ ছাড়াও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাই তাদের নানা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে।
বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও আর্থিক সহায়তায় ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী, সালথাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখন বিস্তৃত এলাকায় তামাকের আবাদ হচ্ছে।
জেলার কয়েকজন তামাকচাষি জানান, বিভিন্ন উপজেলায় ধান, পাট, গম, মরিচ, আলু, পেয়াজ, কপিসহ সব ধরনের শস্য ও সবজির উৎপাদন হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফসলে লোকসান দিতে হয়েছে। তাই বেশি মুনাফার সুযোগ থাকায় বাধ্য হয়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন সাধারণ কৃষকরা।
তাছাড়া তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের তামাক চাষে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে তামাকের বীজ, সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থ প্রদান করছে।
শুধু তাই নয়, তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়োগ করা সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। বাজারে তামাকের চাহিদা থাকায় বিক্রিতেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না কৃষকদের।
এছাড়া কৃষকদের সুবিধার জন্য কোম্পানিগুলো ক্ষেত থেকেই তামাক নিয়ে যায়।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকদের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে অসহযোগিতা করেন না। তাই লোকসানের মুখে পড়ে নানা প্রচলিত শস্য চাষ হ্রাস পাচ্ছে এবং তামাকের চাষ বাড়ছে।
কৃষকরা জানান, তারা বারবার চেষ্টা করেও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের দেখা পান না। প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাহায্য না পেয়েই বিভিন্ন ফসল আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো।
বোয়ালমারীর হাসামদিয়া গ্রামের তামাক চাষি কিবরিয়া ও সুজায়েত জানান, অন্যান্য ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে তারা তামাক চাষ করছেন।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক মো. সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিন দিন তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামাক চাষের ব্যাপারে যারা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার কথা তাদের দেখা পাওয়া যায় না।
অপরদিকে সিগারেট কোম্পানিগুলো বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে, বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উচিত চাষিদের কাছে গিয়ে তাদের তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করা।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিরাজুল হক তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে জড়িতরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া ক্রনিক ব্রংকাইটিস, ক্রনিক অ্যাজমাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর চন্দ্র ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। যারা তামাক চাষাবাদ করছেন তারা নিজেদের উদ্যোগেই করছেন।”
ফরিদপুরে এবার প্রায় ২৮ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হচ্ছে বলে জানান তিনি।