“তোর বাপকে ফোন দিয়ে টাকা আনতে বল নইলে মাদক মামলায় চালান দিয়ে দেব।”
Published : 05 May 2024, 04:47 PM
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ডিবি পরিচয়ে এক যুবককে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের এক এএসআইকে অবরুদ্ধ এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে জনতা।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার গোগ্রাম বাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আব্দুল মতিন জানান।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে অবরুদ্ধ এএসআই আনোয়ারকে উদ্ধার করে।
অপহরণের শিকার সোহান আলী (১৮) গোগ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী মুর্ত্তজা আলীর ছেলে।
এ বিষয়ে সোহান আলী বলেন, “রাত সাড়ে ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে সামনের মোড়ে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে চারজন এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এর পর নাম জিজ্ঞাসা করে। নাম-ঠিকানা বলার পর আমাকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর আমাকে হাতকড়া পরানো হয়।
“এরপর প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাশে পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় তারা বলে, তোর বাপকে ফোন দিয়ে টাকা আনতে বল নইলে মাদক মামলায় চালান দিয়ে দেব। এ সময় আমার ফোনে বারবার ফোন আসছিল। কিন্তু তারা ফোনে কথা বলতে দেয়নি। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বসন্তপুর-খেতুরধামের রাস্তার ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে যায় তারা।”
গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, “ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোহানকে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই বাজারের লোকজন দেখতে পায়। এরপর এএসআই আনোয়ার সাদা পোশাকে গোগ্রাম বাজারে গেলে লোকজন সোহানের খোঁজ নেয়। এএসআই কোনো খোঁজ দিতে না পারলে সেখানে স্থানীয় লোকজন তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিলে উত্তেজিত জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।
“খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে সেখানে যান গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানা এবং গোদাগাড়ী থানার ওসি আব্দুল মতিন। পরে তারা স্থানীয়দের শান্ত করে আনোয়ারকে উদ্ধার করে। এ সময় তারা সোহানকে ফেরত চান। এ সময় সোহানের মোবাইল ফোনে অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ওসি। এরপর তারা সোহানকে ছেড়ে দেয়।”
চেয়ারম্যান মজিবুর বলেন, “রাতেই পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। সোহানকে কারা অপহরণ করেছে সেটি তদন্ত করে বের করার জন্য বলেছি। এর সঙ্গে পুলিশ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার দ্রুত দাবি করেছি।”
বিষয়টি জানতে চাইলে এএসআই আনোয়ার বলেন, “সোহানকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। শনিবার রাতে আমার ডিউটি শেষে গোগ্রাম বাজার পার হয়ে কিছুটা গেলে কয়েকজন এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং সোহানের বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় অনেক লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পরে আমি প্রেমতলী কেন্দ্রের ইনচার্জকে ফোন করে বিষয়টি জানাই।
তবে রাতে সাদা পোশাকে গোগ্রাম বাজারে কেন গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
ওসি আব্দুল মতিন বলেন, কারা সোহানকে তুলে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে; বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলেও জানান ওসি।