মৃত্যু সনদ জালিয়াতির মামলায় রিমান্ডের পরই ফের তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেল পুলিশ।
Published : 05 May 2024, 04:56 PM
মানবপাচার আইনের মামলায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিন হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম শান্তা আক্তার রোববার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মিল্টনকে এদিন আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শিকদার মহিতুল আলম। মিল্টনের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চান আইনজীবী আব্দুস ছালাম সিকদার।
শুনানিতে তিনি বলেন, “যার কেউ নেই; অনাথ, অর্ধাঙ্গ, ক্ষুধার্ত, মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে তাদের আশ্রয় দেন মিল্টন সমাদ্দার। ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এক শিশুকে নিয়ে আসেন রাকিব নামে একজন। পরে মিল্টন তাকে রিসিভ করেন। ২০২০, ২১, ২২, ২৩-এ ডিবি কোথায় ছিল?”
‘প্রভাব খাটিয়ে’ এম রাকিবকে দিয়ে এ মামলা করানোর অভিযোগ তুলে আইনজীবী বলেন, “বরিশালের ভাষায় একটি কথা আছে ‘সাপে কামড় দিলে, পিঁপড়া-উল্লার বিষও জমা হয়’।”
আইনজীবী আব্দুস ছালাম সিকদার বলেন, “মিল্টন কিন্তু রাকিবের কাছে বাচ্চাকে আনতে যাননি। বরং রাকিবই এসেছে বাচ্চাটাকে নিয়ে। খাওয়া, পরা, চিকিৎসা, মানবিক সাহায্য যা করার করেছেন মিল্টন। তখন তিনি (রাকিব) কোথায় ছিলেন? বাংলাদেশে আরেকজন মাদার তেরেসা হলে তিনি হতেন মিল্টন সমাদ্দার।”
যে শিশুকে নিয়ে মামলা করা হয়েছে, সেই শিশু আশ্রমের বাবুর্চির কাছে বড় হচ্ছে বলে দাবি করেন মিল্টনের আইনজীবী।
তিনি বলেন, “তিন বছর ৭ মাস পর মিডিয়ার ঝলকে মামলা। বউয়ের দোষ ধরতে হলে পায়ে পায়ে ধরা যায়- মিল্টন এখন সেই পর্যায়ে গেছে।”
মিল্টন এ সময় বলেন, “আশ্রমে ৪৫টি বাচ্চা আছে। ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে।”
শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন বাতিল করে মিল্টনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এর আগে ঢাকা মহানগর হাকিম মেহেরা মাহবুব মানবপাচার মামলায় মিল্টনকে গ্রেপ্তার দেখানোর এক আবেদন মঞ্জুর করেন।
আশ্রমের বাসিন্দাদের জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে করা প্রথম মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
ওই রিমান্ড শেষেই আরেক মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেল পুলিশ।
সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করার ছবি-ভিডিও শেয়ার করে আলোচনায় আসা মিল্টন সমাদ্দারকে ১ মে সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের নামে তার অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকলে ফের তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপরই তৎপর হয় পুলিশ।
সিটি করপোরেশনের সিল নকল করে আশ্রমের বাসিন্দাদের জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পরদিন তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২ মে মারধর ও মানবপাচারের অভিযোগে আরো দুটি মামলা হয়।
মারধরের মালাটি করেছেন রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান। মিল্টনের আশ্রমে থাকা একজনকে মারধরের অভিযোগে তিনি এ মামলা করেন। মিল্টন ছাড়া অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে এতে আসামি করা হয়েছে।
আর মানবপাচারের অভিযোগে মামলাটি করেছেন জিগাতলার বাসিন্দা এম রাকিব। মামলায় মিল্টনকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত তিন-চারজনের কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন-
মিল্টন মরদেহ দাফন করতেন রাতে, দিতেন ভুয়া সনদ: ডিবি
মৃত্যু সনদ জালিয়াতি: মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আরও ২ মামলা
গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দার, 'অনিয়ম-অভিযোগ' নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি