দেশের আইনসভার সদস্য হিসাবে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের শপথ নিলেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সাংসদরা।
Published : 09 Jan 2014, 09:40 AM
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর জাতীয় সংসদের শপথ কক্ষে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথমে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সদস্যদের শপথ পড়ান। এরপর ক্রমানুসারে অন্য দল ও স্বতন্ত্র সাংসদরা শপথ নেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী দশম সংসদের সদস্য হিসেবে ২৮৯ জনের শপথ নেয়ার কথা থাকলেও এদিন শপথ নিয়েছেন ২৮৪ জন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ পাঁচজন ছিলেন অনুপস্থিত।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের সদস্যরা প্রথম দফায় শপথ নেন।
দেশের প্রথম নারী স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে তারা বলেন, “সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইয়া সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব এবং সংসদ-সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিব না।”
এরপর সবাই শপথপত্রে নিজেদের আসনের নাম লিখে সই করেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিব আশরাফুল মকবুল।
শপথ শেষে সোনালী শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শুভেচ্ছার ফুল তুলে দেন আকাশী-সাদা শাড়ি পরিহিত শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এরপর অন্যান্য দলের ও সতন্ত্র সদস্যরাও ধাপে ধাপে স্পিকারের কাছ থেকে সাংসদ হিসাবে শপথ নেন। রেওয়াজ অনুযায়ী শপথ শেষে তারা সংসদ সচিবের কার্যালয়ে স্বাক্ষর খাতায় সই করেন এবং ছবি তোলেন।
এছাড়া সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটারিয়ায় তাদের জন্য চা-চক্রেরও আয়োজন ছিল।
প্রথম দিন আওয়ামী লীগের ২২৬ জন, জাতীয় পার্টি ৩১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ৪ জন; জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও তরিকত ফেডারেশন এক জন করে এবং ১৪ জন স্বতন্ত্র সাংসদ শপথ নিয়েছেন।
এদের মধ্যে ২৮৩ জন রীতি অনুযায়ী জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে শপথ নিলেও পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় কুমিল্লা-৯ আসনের সাংসদ তাজুল ইসলাম শপথ নেন স্পিকারের কক্ষে।
অনুপস্থিত পাঁচজনের মধ্যে রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সিএমএইচে থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে আসেননি।
আর কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল দেশের বাইরে থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে আসেননি বলে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠানের পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে এবং ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য রওশন এরশাদকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়। তারাই হবেন এ সংসদের সংসদ ও বিরোধী দলীয় নেতা।
নবম সংসদে বিরোধী দলে থাকা বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট হয়, যাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন যে সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে, তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা আগামী রোববারই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেবেন বলে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন বসারও কথা রয়েছে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আর গত ৫ জানুয়ারি ভোটে নির্বাচিত হন ১৩৯ জন। বাকি আটটি আসনে পুনর্ভোট হবে ১৬ জানুয়ারি।
এর মধ্যে যশোর-১ আসনে বিজয়ী শেখ আফিলউদ্দিন ও যশোর-২ আসনে মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি লংঘনের অভিযোগ থাকায় ওই দুটি আসন বাদ রেখে বাকি ২৯০ আসনের গেজেট বুধবার প্রকাশ করে ইসি।