বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে শাহবাগে বাসে আগুন দিয়ে ১১ যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম।
Published : 08 Dec 2013, 08:54 PM
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির শীর্ষনেতাদের আসামি করে মামলা দায়েরের মধ্যে রোববার এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নানক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজমসহ ১৮ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আদেশটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর দেন ঢাকার মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী।
রোববার সাংবাদিকদদের অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রকাশ পেলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান তা স্বীকার করেন।
ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে আবু সাঈদ খোকনও এই মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন।
২০০৪ সালের ৪ জুন শাহবাগে হোটেল রূপসী বাংলার সামনে বিআরটিসির দোতলা বাসে গানপাউডার দিয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
বিরোধী দলের বর্তমান আন্দোলনে গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার জবাবে বিএনপি নেতারা নয় বছর আগের সেই ঘটনা তুলে ধরে এখনো বলছেন, গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ইতিহাস আওয়ামী লীগেরই রয়েছে।
তখন আওয়ামী লীগ যেমন ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল; এখনো বিএনপি নেতারা চলমান ঘটনাগুলোতে তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ওই ঘটনার পরপরই রমনা থানা পুলিশ একটি মামলা করে। শফিকুল ইসলাম কালু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নানক, আজম ও সাঈদ খোকনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম বলেন।
পরে কালু জানান, পুলিশের চাপে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম বলেছিলেন তিনি।
এবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের হরতাল-অবরোধে দেয়া আগুনে ১৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ নভেম্বর শাহবাগে একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে দগ্ধ হন ১৮ জন, যার মধ্যে তিনজন মারা যান।
এই ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আসামি করা হয়েছে।
নয় বছর আগের ওই মামলায় নানক, আজম ও খোকন ছাড়া আর যারা অব্যাহতি পেয়েছেন, তারা হলেন- দিনেশ সরকার, আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীর আলম, শহীদুল ইসলাম ঠান্ডু, আবু হান্নান সিদ্দিকী, মো. মনির, উজ্জ্বল মাহমুদ, রেজাউল করিম, মো. মাছুম, আনোয়ার হোসেন সুজন, শফিকুল ইসলাম কালু, গাজী হাবিবুল আলম, হাসানুর রহমান,এ এফএম মিজানুর রহমান, ও রুহুল আমিন।
এই মামলা দায়েরের পর আটজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেন। এর কেউই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেননি। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার আব্দুল হালিম গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার নথিতে দেখা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ভবিষ্যতেও এ ঘটনার উন্মোচনের কোনো সম্ভাবনা না দেখে আসামিদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে বিচারক উল্লেখ করেছেন।
নয় বছর আগে ওই দোতলা বাসে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে মীম নামে দুই বছরের এক শিশু, নাবিলা নামে ১০ বছরের এক কিশোরী এবং রেহান উদ্দিন নামে ১৫ বছরের এক তরুণও ছিল।
এছাড়াও মারা যান আব্দুল জলিল, ইয়াসমিন বেগম, দেলোয়ার হোসেন, ফোরকান মোল্লা, ফিরোজা বেগম, ওয়াহিদুর, খাদিজা খান। আর একজন পুরুষ মারা যান, যার পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি।
সাম্প্রতিক ঘটনায় গাজীপুরে মনির হোসেন নামে এক কিশোর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। মারা যান অহিদুর রহমান নামে ঢাকা কলেজের এক ছাত্র, মেহেদি নামে এক কিশোর পরিবহন শ্রমিক।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।