এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে আদালতের শরণ নিলেও এখন সেই মামলা এগিয়ে নিচ্ছে না বাদী পক্ষই।
Published : 17 Apr 2013, 01:04 PM
গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাতে সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পর এজন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি।
এর দুদিন পর স্বামীর সন্ধান চেয়ে হাই কোর্ট রিট আবেদন করেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, যাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়।
গত বছরের ১৯ এপ্রিল আদালত রুল জারির পরপরই তার জবাব দেন বিবাদীরা। কিন্তু তারপর বছর গড়ালেও শুনানি হয়নি এই রিট আবেদনের। এই সময়ে সন্ধান মেলেনি বিএনপি নেতারও।
বাদীর অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ না পাওয়ায় তারা শুনানি করছেন না।
আদালতে সক্রিয়তা না দেখালেও দলের নেতার সন্ধান দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বুধবারও নতুন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।
ওই বেঞ্চের তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহের হোসেন সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে বিভিন্ন রিট আবেদনে জারি করা রুলের জবাব আসতে দেরি হলেও এই রুল জারির অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পাঁচ বিবাদীর জবাব আদালতে চলে আসে।
“এরপর এই ধরনের আবেদনের শুনানির উপযুক্ত আদালতে তা পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আজো সেই শুনানি হয়নি বলে শুনেছি।”
সরকারি এই কৌঁসুলি বলেন, “সরকার যদি জবাব না দিত, তাহলে তখন বিরোধীরা বলত যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার এটা করতে চাচ্ছে না। কিন্তু এখানে সরকার এলেও এখন তারাই শুনানি করতে চান না।”
রিট আবেদনটি পরে বিচারপতি আবদুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন আদালতে শুনানির জন্য যায়।
ওই আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীর বলেন, এই মামলার শুনানির জন্য তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও বাদী পক্ষ বারবার সময়ের আবেদন করায় শুনানি শুরু করা যায়নি।
“এরপর ওই কোর্টের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে যায়। তারপর তারা আর কোনো আদালতে মামলাটি শুনানির জন্য গেছে বলে আমি জানি না।”
বাদী পক্ষের আইনজীবী খোকন বলেন, বর্তমানে কোনো আদালতেই রিট আবেদনটি বিবেচনায় নেই ।
রিট আবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইলিয়াসকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে সরকার শুরু থেকে এই অভিযোগ নাকচ করে আসছে।
খোকন বলেন, “সরকার অস্বীকার করলে আমরা কী করতে পারি? এখন নতুন কোনো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কোনো কিছুই করার নেই।”
রিট আবেদন ও রুল: ফিরে দেখা
এই বিএনপি নেতাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তাহসিনার রিট আবেদনে আদালত রুল দিয়েছিল হাই কোর্ট।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি/বিশেষ শাখা), পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ তদন্ত বিভাগ/সিআইডি), ঢাকা জেলা প্রশাসক, র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, উপকমিশনার (ডিবি), বনানী থানার ওসি ও গুলশান থানার ওসিকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
তারা যথাসময়ে জবাব দিয়েছেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান।
ওই দিনই তাহসিনার আবেদনে রুল জারির আগে বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আলাদা একটি রুল দিলেও বিএনপি নেতার আইনজীবীদের অনুরোধে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোপন স্থানে রেখে ইলিয়াস আলীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।
তাহসিনা দাবি করেন, বেশ কয়েকটি মামলার আসামি ইলিয়াস সবকটিতে জামিনে থাকলেও দুর্নীতি ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে তাকে ‘অবৈধভাবে’ আটকের চেষ্টা করে আসছিল।
স্বামীর সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন তাহসিনা।
ইলিয়াসপত্নী স্বামীর অন্তর্ধাণের বছরপূর্তির দিন বুধবারও সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন সরকার আন্তরিক হলে ফিরে আসবে ইলিয়াস।