যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল, আটক শীর্ষনেতাদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর হরতালে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ভাংচুর, হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।
Published : 31 Jan 2013, 05:15 AM
হরতালের সময় সংঘর্ষে বগুড়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। জামায়াত বলছে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় ওই দুজন মারা গেছেন।
এর জেরে শনিবারও বগুড়ায় হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
এছাড়া যশোরের মনিরামপুরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে অসুস্থ হয়ে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া হরতালের মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সারাদিনই ঝটিকা মিছিল নিয়ে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায় হরতালকারীরা। কোথাও কোথাও হাতবোমা ফাটিয়ে সৃষ্টি করা হয় আতঙ্ক।
বুধবার বিকালে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি ‘না পেয়ে’ সারা দেশে এই হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামী। তাদের প্রধান শরিক বিএনপিও এই কর্মসূচিতে সমর্থন দেয়।
ঢাকায় হরতাল চলাকালে গাড়ি ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের ২২ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আর হরতালের আগের দিন বুধবার নগরীতে দুটি গাড়ি ভাংচুর ও দুটি গাড়িতে আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ৩৮ নেতাকর্মীকে।
হরতালে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীর প্রতিটি সড়কে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য। এর মধ্যেও যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, শ্যাওড়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করার চেষ্টা চালায় হরতালকারীরা। পল্টন ও বাংলামটর এলাকায় ফাটানো হয় কয়েকটি হাতবোমা।
মিরপুর-১১ নম্বর এলাকায় একটি গাড়ি ভাংচুর করা হয় এবং যাত্রাবাড়ীতে পুড়িয়ে দেয়া হয় একটি টেম্পো।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পল্টন মোড়ের প্রীতম হোটেলের সামনে তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। মীর হাজারিবাগ এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল থেকে কয়েকটি বাস ভাংচুর করা হয়।
এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
সকালে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হরতালের কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে গণপরিবহনের সংখ্যা কম হলেও রিকশা ও অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের রাস্তায় সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
হরতালের সকাল থেকেই বগুড়ায় জামায়াতে ইসলামী কর্মীরা দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে যোগ দেয় ‘হরতালবিরোধীরাও’। দিনভর সংঘর্ষে নিহত হন দুইজন।
সকালে শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় হরতালের পক্ষে-বিপক্ষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন ছাত্রশিবিরের আযিযুল হক কলেজ শাখার সভাপতি আবু রুহানী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তিনি মারা যান বলে বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মকবুল হোসেন জানান।
পুলিশ বলছে, নিহত এক ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান, যিনি একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কাজে তিনি কুমিল্লা থেকে বগুড়া এসেছিলেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নয় পুলিশ।
অন্যদিকে নিহত দুজনকেই নিজেদের নেতা-কর্মী দাবি করে জামায়াত বলছে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় ওই দুজন মারা গেছেন।
জামায়াতের বগুড়া শহর শাখার সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েলের দাবি, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা মিজানুরকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
ছাত্রশিবির নেতার মৃত্যুর খবরে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের সাতমাথা জিরো পয়েন্টে কয়েক দফা পুলিশের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
নেতা-কর্মী ‘হত্যার’ প্রতিবাদে শনিবার বগুড়ায় হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
এদিকে রুহানীর মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধ শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতে নিহত হয় আবদুল্লাহ নামে একজন। তিনি শিবিরকর্মী বলে জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন।
পুলিশের মৃত্যু
যশোরের মনিরামপুরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে অসুস্থ হয়ে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে সকালে।
জহুরুল ইসলাম নামের ওই পুলিশ কনস্টেবল মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মনিরামপুর থানার উপ-পরিদর্শক জামিরুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল করার জন্য পুরনো বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন জামিরুল।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রেশমা শারমিন বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রামে সকালে হরতাল সমর্থকরা গাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) মো. হাসান চৌধুরী জানান, সকাল সোয়া ৮টার দিকে বন্দর থানা এলাকায় একটি টেম্পোতে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে হরতাল সমর্থকরা। এছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
হরতালের শুরুতেই সিলেটে ঝটিকা মিছিল, ভাংচুর ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
জামায়াত-শিবির কর্মীরা সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, মিরাবাজার ও চণ্ডিপুল এলাকায় হরতালের সমর্থনে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। ফাটানো হয় অন্তত ২৫টি হাতবোমা। কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে হরতাল সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
রাজশাহীতে পুলিশের অনুমতি নিয়ে হরতাল সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, সংঘাত এড়াতে জামায়াত-শিবির কর্মীদের হরতালের সমর্থনে মিছিল করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সকাল ৯টার পর হরতালের সমর্থনে আর কেউ মাঠে না থাকার শর্তে এই মিছিলের অনুমতি দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার থেকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করে শিবির কর্মীরা। তাদের এ কর্মসূচি পালিত হয় পুলিশ পাহারায়।