নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে পুরনো সিইসির নাম আসার প্রেক্ষাপটে ড. কামাল হোসেন বলছেন, এ টি এম শামসুল হুদাকে এই পদে রেখে দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। একই মত জানিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও।
Published : 12 Jan 2012, 01:59 PM
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি এবং বিকল্পধারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
বিদায়ী সিইসিকে পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনি কোনো জটিলতা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাকে (শামসুল হুদা) পুনঃনিয়োগে বাধা নেই।”
এক্ষেত্রে এরশাদের আমলে বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলামকে সিইসি পদে পুনঃনিয়োগের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
সংবিধান প্রণয়ণ কমিটির আরেক সদস্য সুরঞ্জিত বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পুনঃনিয়োগ করা যাবে না, তা সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা নেই।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করবেন।
এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদে মেয়াদ তার কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরকাল হবে এবং ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার-পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এমন কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভে যোগ্য হবেন না; খ) অন্য কোনো নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভে যোগ্য হবেন, তবে অন্য কোনোভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।
“পুনঃনিয়োগ দিলে কোনো বাধা তো দেখছি না,” বলেন সুরঞ্জিত।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া এ টি এম শামসুল হুদার মেয়াদ আগামী ফেব্র“য়ারি মাসে শেষ হতে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে মেয়াদের প্রায় সব নির্বাচনই নিরপেক্ষভাবে করতে পেরেছেন বলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই মনে করেন।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। সংলাপে অধিকাংশ দলই সংবিধান অনুসারে সিইসি ও ইসি নিয়োগে আলাদা আইন করা ও অনুসন্ধান কমিটির পক্ষে মত দিয়েছে। বিএনপি অবশ্য বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পরই কেবল ইসি গঠন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশা করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল। তিনি বলেন, “সবার যুক্তি বিবেচনা করে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ইসি নিয়োগ দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি।”
স্বাধীনতা উত্তর সিইসি এবং তাদের মেয়াদ
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত দেশের নির্বাচন কমিশনে ১০ জন সিইসি ও ১৯ জন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে পুরো ইসি পুনঃনিয়োগের ঘটনা গণতান্ত্রিক সরকার আমলে ঘটেনি। সামরিক শাসনামলে এক জন সিইসির মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনা ঘটেছে একবার।
দেশের প্রথম সিইসি মো. ইদ্রিসের পাঁচ বছর মেয়াদ ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই শেষ হলে পর দিনই নিয়োগ পান বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম। এরশাদের শাসনামলে তিনি প্রায় আট বছর সিইসি ছিলেন।
১৯৮৫ সালে ১৭ ফেব্র“য়ারি নুরুল ইসলামের মেয়াদ শেষের দিনে নিয়োগ পান বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসুদ। এরপর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে ছিলেন সিইসিরা।
বিচারপতি সুলতান হোসেন খান ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি সিইসি হন। এরশাদ শাসনামলে তিনি ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিইসি ছিলেন।
বিচারপতি আব্দুর রউফ ২৫ ডিসেম্বর থেকে বিএনপি শাসনামলে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫ পর্যন্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করেন।
২৭ এপ্রিল বিচারপতি এ কে এম সাদেক ২৭ এপ্রিল থেকে এপ্রিল ১৯৯৬ পর্যন্ত ছিলেন।
১৯৯৬ পর্যন্ত সিইসি নিয়োগ পাওয়া সবাই ছিলেন বিচারপতি। ওই বছরের ৯ এপ্রিলে মোহাম্মদ আবু হেনা প্রথম আমলা হিসেবে সিইসি পদে নিয়োগ পান। তিনি ২০০০ সালে ৮ মে পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর এম এ সাইদ ২৩ মে এসে বিদায় নেন ২০০৫ সালের ২২ মে।
এরপর বিচারপতি এম এ আজিজ সিইসি পদে যোগ দিয়ে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি বিদায় নেন। এরপরই শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্বে আসে।