সিলেট, মে ৩০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) - ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুহাসিনী দাস শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
সুহাসিনী দাস প্রতিষ্ঠিত উমেশচন্দ্র-নির্মলাবালা ছাত্রাবাসের ছাত্র প্রলয় রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সুহাসিনী দাস দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। সোমবার (২৫ মে) গোসল করতে গিয়ে পড়ে গেলে তাকে নগরীর সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।"
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন বলে প্রলয় জানান।
তিন মেয়ে নিলীমাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সুহাসিনী দাসের মৃত্যুর খবর শুনে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের লোকজন রাতে সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ভিড় করেন।
আজীবন সংগ্রামী নারী সুহাসিনী দাস বাংলা ১৩২২ সালের পহেলা ভাদ্র সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবার নাম প্যারীমোহন রায় ও মায়ের নাম শোভা রায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সিলেট শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কুমুদ চন্দ্র দাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের চার বছরের মধ্যেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়।
এর কিছুদিন পরই তিনি প্রথমে সমাজসেবা ও পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। আমৃত্যু তিনি মানুষের সেবা করে গেছেন। সকলের কাছে 'মাসীমা' হিসেবে পরিচিত সুহাসিনী দাস শ্বশুড়ের পরিবার থেকে অঢেল সম্পত্তি পেয়েছিলেন। এর অল্প কিছু নিজের খরচের জন্য রেখে বাকি সব জণকল্যাণমূলক কাজে বিলিয়ে দিয়েছেন।
বিগত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে সুহাসিনী দাস পারিবারিক গণ্ডী অতিক্রম করে কংগ্রেসে যোগ দেন। স্রেফ চরকা দিয়ে খদ্দর কাপড় বুনতে গিয়ে সিলেট শহরের জামতলা পাড়ার এ গৃহবধূ কংগ্রেসের মহিলা সংগঠনের সদস্য হন। পরবর্তীকালে বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা হিসেবে পরিচিতি পান।
১৯৪২ সালে 'ভারত ছাড়' আন্দোলন শুরু হলে সুহাসিনী দাসকে কারাগারে যেতে হয়। ১৯৪৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন তিনি।
সুহাসিনী দাস বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেরও সংগঠক। ১৯৪৭ সালে কুলাউড়ার রঙ্গিরকুল পাহাড়ে কংগ্রেস কর্মীরা একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কালক্রমে সুহাসিনী দাস সেই আশ্রমেরই অধ্যক্ষার দায়িত্ব নেন। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দুর্যোগময় দিনগুলোতে তিনি তার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে আশ্রমটিকে রক্ষা করেন। পাকবাহিনী যখন গণহত্যা চালাচ্ছিল তখন সুহাসিনী দাস রঙ্গিরকুল আশ্রমে থেকে মানুষের সেবা করেন। বারবার পাকবাহিনী আশ্রমে হামলা চালালেও প্রতিবারই তিনি আশ্রম ও নিজেকে রক্ষা করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে যুক্ত হন সমাজসেবায়। বিশেষ করে নারীদের স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে পালন করেন বিশেষ ভূমিকা। ১৯৭৩ সালে তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে সংবর্ধিত হন। সমাজসেবায় গুরুত্ত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৬ সালে সুহাসিনী দাসকে রাষ্ট্রীয় 'সমাজসেবা' পুরস্কার দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রীর শোক
সুহাসিনী দাসের মৃত্যুতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, "সুহাসিনী দাসের মৃত্যু এক ইতিহাসের অবসান। তবে তিনি চিরদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তিনি মানুষের সেবা করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি একজন মুরব্বী হারালাম।"
সুহাসিনী দাসের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান অর্থমন্ত্রী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমএসবি/২২৩১ ঘ.