‘জয় পুরোপুরি ভারতের প্রাপ্য’, প্রতিপক্ষকে এই কৃতিত্ব দিলেও সেমি-ফাইনালে নিজের ভুল নিয়ে আক্ষেপ করলেন ইংলিশ অধিনায়ক।
Published : 28 Jun 2024, 10:02 AM
সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচে ব্যাটে-বলে স্রেফ বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রতিপক্ষকে কৃতিত্ব দিতেই হয়। ভারতীয় দলের সেই প্রশংসা করছেন জস বাটলারও। তার মতে, পুরোপুরি যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে ভারত। তবে ম্যাচ শেষে নিজের একটি আফসোস সঙ্গী ইংলিশ অধিনায়কের। পেছন ফিরে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছে, মইন আলিকে বোলিং করানো উচিত ছিল!
ভারতের ব্যাটিং ইনিংসের সময় ও ইনিংস শেষেও এই প্রশ্নটি ছিল। আদিল রাশিদ যথারীতি দারুণ বোলিং করেছেন। বিশেষজ্ঞ স্পিনার না হলেও পুরো চার ওভার আঁটসাঁট বোলিং করেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। কিন্তু মইনকে বোলিংয়ে দেখা যায়নি।
এমনিতে এবারের বিশ্বকাপে মইনকে নিয়মিত বোলিংয়ে সেভাবে কাজে লাগাননি বাটলার, কিংবা প্রয়োজন পড়েনি। তবে এই ম্যাচের প্রেক্ষাপটে এটা বিস্ময়করই ছিল। শুরুর কয়েক ওভারের পরই বোঝা গেছে, উইকেট বেশ মন্থর, বল ব্যাটে এসেছে থমকে। ভারতীয় ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে বেশ কিছু বল বিপজ্জনকভাবে নিচু হয়েছে। লিভিংস্টোনকে খেলতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের।
সেখানে দুই স্পিনারের বেশি কাজে লাগাননি বাটলার। রাশিদ চার ওভারে দিয়েছেন ২৫ রান, লিভিংস্টোন ২৪ রান। বাকি ১২ ওভার পেসারদের দিয়েই করিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। শেষ দিকে বেশ খরুচে ছিলেন পেসার ক্রিস জর্ডান। সেখানেই বড় ব্যবধান গড়া হয়ে যায়। অথচ রাভিন্দ্রা জাদেজা, আকসার প্যাটেলদের মতো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের সামনে মইনকে কাজে লাগানো যেত।
ম্যাচ শেষে বাটলার নিজেই সেই ভুল নিয়ে আক্ষেপ করলেন কিছুটা।
“অবশ্যই দারুণ কিছু স্পিনার তাদের আছে। আমাদের দুই স্পিনারও ভালো বল করেছে। তবে, এখন পেছন ফিরে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, স্পিন যেভাবে কার্যকর হয়েছে, মইনকে বোলিংয়ে আনা উচিত ছিল আমার।”
শেষ দিকের বাড়তি রানগুলোই যে স্কোর ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে, তা ফুটে উঠল বাটলারের কথায়। সবশেষ বিশ্বকাপে ভারতকে সেমি-ফাইনালে ১০ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। এবার কন্ডিশনের কারণেই উল্টো ফল, বললেন ইংলিশ অধিনায়ক।
“হতাশাজনক…তারা নিশ্চিতভাবেই আমাদেরকে উড়িয়ে দিয়েছে। আমার মনে হয়, ওদেরকে আমরা ২০-২৫ রান বেশি বেশি দিয়ে ফেলেছি। ওই উইকেটে খেলা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং আমার চাওয়া ছিল ওদেরকে ১৪০-১৪৫ রানে আটক রাখা। ১৭০ করার পর রান তাড়া করাটা সবসময়ই কঠিন ছিল। হ্যাঁ, তারা আমাদেরকে স্রেফ বিধ্বস্ত করেছে এবং জয়টা তাদের পুরোপুরি প্রাপ্য।”
“দুই বছর আগের তুলনায় কন্ডিশন এখানে ভিন্ন। কৃতিত্ব ভারতকে দিতেই হবে। তারা দারুণ একটি ম্যাচ খেলেছে এবং জয়টা তাদেরই প্রাপ্য।”
প্রশ্ন উঠেছে টসের সিদ্ধান্ত নিয়েও। বাটলার টস জিতে বোলিং নিয়েছেন। রোহিত টস হারার পর বলেছেন, তারা আগে ব্যাটিংই করতেন। বাটলার অবশ্য মনে করেন, ম্যাচের ফলে টসের সিদ্ধান্তের ভূমিকা তেমন ছিল না।
“বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, (উইকেট) খুব একটা বদলাবে না। আমার মনে হয়, আসলেই খুব একটা বদলায়নি তা। বোলিংয়েও ওরা আসলে আমাদেরকে অনেক পেছনে ফেলেছে। ব্যাটিংয়ে প্রয়োজনীয় রানের চেয়েও বেশি স্কোর তারা করেছে। কাজেই আমার মনে হয় না, টস খুব বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে এখানে।”
শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে সেমি-ফাইনালে হেরে গেলেও দলকে নিয়ে গর্ব ঠিকই আছে বাটলারের। একটা সময় গ্রুপ পর্যায় থেকে ছিটকে যাওয়ার দুয়ারে ছিল ইংলিশরা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা শেষ চার নিশ্চিত করে সবার আগে। তবে শেষটা যেভাবে হলো, সেই হতাশাও সঙ্গী ইংলিশ অধিনায়কের।
“বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল খেলতে পারাই একটা অর্জন। অবশ্যই শেষ পর্যন্ত যেতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে যা কিছু হয়েছে, এই পর্যন্ত আসতে পেরে এবং ছেলেরা যেভাবে চেষ্টা করেছে, সবকিছু নিয়ে গর্বিত আমরা। আসরজুড়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। তার পরও দল হিসেবে আমরা এককাট্টা থেকেছি, দারুণ কিছু ক্রিকেট উপহার দিয়েছি। তবে সবচেয়ে জরুরি ছিল যখন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখনই কিছু ঘাটতি রয়ে গেল আজকে।”