শিমু হত্যার পেছনে দাম্পত্য কলহ, স্বামীই ঘাতক: পুলিশ

‘দাম্পত্য কলহের জের ধরে’ অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে তার স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল হত্যার পর বন্ধু এসএম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদের সহায়তা নিয়ে লাশ গুম করে বলে পুলিশের ভাষ্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2022, 10:18 AM
Updated : 18 Jan 2022, 11:57 AM

ওই দু্জনকে আগের রাতে গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এতথ্য জানান।

দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বিষয়াদি ও দাম্পত্য কলহের’ কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে শিমুর স্বামী নোবেল ও লাশটি গুম করতে সহায়তা করেছে নোবেলের বন্ধু ফরহাদ।

স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন ৪০ বছর বয়সী শিমু। এক দিন আগে কলাবাগানের বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি তিনি। তার সন্ধানে সোমবার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নোবেল।

এর মধ্যে সোমবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তা থেকে এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে রাতে গিয়ে ওই লাশ শিমুর বলে শনাক্ত করেন তার বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন।

এ ঘটনায় রাতেই নোবেল ও ফরহাদকে আটক করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ সুপার মারুফ বলেন, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

“বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলের সাথে (শিমুর) দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে গত ১৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে যে কোনো সময় খুন হন শিমু।”

লাশ উদ্ধারের পর কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবু সালাম মিয়া বলেছিলেন, “অন্য কোথাও তাকে হত্যার পর বস্তায় ভরে গাড়িতে করে ওখানে ফেলে রেখে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।”

শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন সাংবাদিকদের বলেন, শিমু রোববার গভীর রাতেও বাসায় না ফেরায় এবং তার ফোন বন্ধ থাকায় তাদের সন্দেহ হয়। এরপর সম্ভাব্য সব জায়গায় তারা খোঁজ নিতে শুরু করেন। বিভিন্ন হাসপাতাল, থানা ও এফডিসিতেও যান।

সোমবার রাতে কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়েই তিনি থানায় ছুটে যান। পরে সেখান থেকে মর্গে গিয়ে  নিশ্চিত হন, সেটা তারই বোনের লাশ।

পরে রাতেই শিমুর স্বামী নোবেল, তার বন্ধু ফরহাদ এবং তাদের গাড়িচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন খোকন।

অভিযোগ পেয়ে নোবেল ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নোবেলের গাড়িটিও জব্দ করা হয়। গাড়িতে রক্তের আলামত ছিল বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খোকন।

ঢাকার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, “যে গাড়ি ব্যবহার করে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে আমরা ইতিমধ্যেই সেই গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়েছি এবং অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছি।

“শিমুর স্বামী নোবেল এবং তার বাল্যবন্ধু ফরহাদ বর্তমানে থানা হেফাজতে আছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।”

কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শিমুর। পরের বছরগুলোতে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের প্রায় ২৫ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাকে। শাকিব খান, অমিত হাসানসহ কয়েকজন তারকার সঙ্গেও কাজ করেছেন।

শিমু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় এবং প্রযোজনাও করেছেন।

তার ফেইসবুক পেইজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রডাকশন হাউজও চালাতেন এই অভিনেত্রী।