ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় মালিকের ও মাস্টার-ড্রাইভারের অবহেলার ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ ঢাকার নৌ আদালতে মামলা করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর।
Published : 26 Dec 2021, 04:47 PM
সেই মামলার প্রেক্ষিতে লঞ্চের অন্যতম মালিক হামজালাল শেখসহ আট জনের বিরুদ্ধে রোববার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন নৌ আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ জয়নাব বেগম।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিকুর রহমান বাদী হয়ে রোববার মতিঝিলের নৌ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন- লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, শামীম আহমেদ, রাসেল আহমেদ, ফেরদৌস হাসান এবং এছাড়া মাস্টার ইনচার্জ রিয়াজ আহমেদ, মাস্টার খলিলুর রহমান, ড্রাইভার ইনচার্জ মাছুম বিল্লাহ ও ড্রাইভার আবুল কালাম।
মামলার বাদী শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই লঞ্চের মালিক কাগজে কলমে পেয়েছি হামজালাল শেখসহ মোট চারজন। তাই তাদেরকেও এ মামলায় আনা হয়েছে।”
মামলায় কী অভিযোগ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, লঞ্চে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল… তৈলাক্ত কোনো পদার্থ ছিল, যার কারণে আগুনের এত ভয়াবহতা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও যথেষ্ট ছিল না।”
আপাতত অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইনের ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারায় মামলা করা হয়েছে জানিয়ে পরিদর্শক শফিকুর বলেন, “এটা প্রাথমিক তদন্ত দেখে করা হয়েছে। তদন্তে আরও গুরুতর প্রমাণ পাওয়া গেলে আরও মামলা করা হবে।
ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার পর আগুনে পুড়ে যায় অভিযান-১০। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আহত হয়ে ৮০ জনের বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রাত ৩টার দিকে যখন চলন্ত লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত হয়, যাত্রীদের বেশিরভাগই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। না থামিয়ে ওই অবস্থায় চালিয়ে নেওয়া হয় অনেকটা পথ। এক পর্যায়ে নদীর মধ্যে পুরো লঞ্চ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানা এলাকা অতিক্রম করার পর ইঞ্জিন রুম থেকে আগুযনের সূত্রপাত হয়। পরপরই আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুরো নৌযানটি আগুনে পুড়ে যায়। সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রও ছিল না। পর্যপ্ত বালির ব্রাক্স ও বালতি ছিল না। ইঞ্জিন রুমের বাইরে অননুমোদিত অনেকগুলো ডিজেল বোঝাই ড্রাম এবং রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ছিল, যা নিয়মের পরিপন্থি।
নৌ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের নৌ কর্মকর্তা বেল্লাল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড।
ওই ঘটনায় পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন শনিবার ঝালকাঠি সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।
এছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির রোববার ২৫ জনকে আসামি করে মামলার আবেদন করলে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন। ওই মামলাতেও লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখকে আসামি করা হয়েছে।
পুরনো খবর