লঞ্চে আগুন: আরেকটি মামলা, মালিকসহ আসামি ২৫

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে, যেখানে লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবরগুনা প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2021, 08:37 AM
Updated : 26 Dec 2021, 08:47 AM

বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির রোববার সকাল ৯টায় আবেদন করলে আদালত পুলিশকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেয়।

বাদীর আইনজীবী সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, “লঞ্চে আগুনের ঘটনায় মালিকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি স্পষ্ট। এতে আমার মক্কেল ক্ষুব্ধ হয়ে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ মাহবুব আলমের আদালতে মামলার আবেদন করেন।

“আবেদন আমলে নিয়ে শুনানি শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে আদেশ দেয়।”

ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে শুক্রবার ভোরের দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। এতে তিন ডজনের বেশি মানুষের প্রাণ যায়। নিখোঁজ হন অনেকে। তাছাড়া দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বরগুনার বাসিন্দা।

মামলার বাদী চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন আসামিদের গাফিলতির কারণে আগুন,  হতাহত ও ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।

“মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করেছি। এ কারণেই আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি করেছি। আমি এ মামলার আসামিদের দ্রুত গেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”

‘লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না’

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা বলতে পারি, এই লঞ্চের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তেমন কার্যকর ছিল না এবং যারা দায়িত্বে ছিল, তারা এটা ম্যানেজ করতে পারেনি।”

রোববার ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধানে চলমান তৃতীয় দিনের অভিযান পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা যখন আগুন নেভাতে যান তখন তারা দেখতে পান, পুরো লঞ্চের প্রতিটি ফ্লোরে আগুন জ্বলছে।

“জাহাজের সামনে থেকে পেছনের অংশ, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশে আগুন জ্বলছিল।”

যখন আগুন লাগে, শীতের রাতে অধিকাংশ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। দুই তলার বন্ধ কেবিনে যারা ঘুমাচ্ছিলেন, তাদের অনেকের বের হওয়ারও সুযোগ হয়নি। সেই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা।

প্রাথমিক অবস্থায় আগুন নেভাতে না পারায় ক্ষয়-ক্ষতি হয় বিপুল।

দুপুরে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে রাখা পোড়া লঞ্চ পরিদর্শনে আসে বরিশাল বিআইডব্লিটিএর পরিদর্শন দল।

এ সময় বরিশাল নৌযানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাহারুল আমীন সাংবাকিদের বলেন, “লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। ঢাকা-বরিশাল রুটের সব লঞ্চেই বিলাসবহুল ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু ইঞ্জিনরুমে নিরাপত্তা জন্য কিছুই থাকে না।”

স্বজনদের দাবি, অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে ঝালকাঠি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নিখোঁজ ৫১ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে বলে ঝালকাঠির ডিসি মো. জোহর আলী জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: