লঞ্চে আগুন: লাশ দেখে চেনার উপায় নেই

ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে এ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃতদের মধ্যে ৩৩ জনের লাশ বরগুনায় পৌঁছেছে। চারজনের লাশ ঝালকাঠি থেকেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অধিকাংশের দেহ এতটাই পুড়েছে যে চেনার উপায় নেই।

বরগুনা ও ঝালকাঠি  প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2021, 04:47 AM
Updated : 25 Dec 2021, 05:27 AM

শুক্রবার গভীর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল হতাহতের ঘটনা ঘটে।

শনিবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জালাল উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ৩৩টি মৃতদেহ বরগুনা সদর হাসপাতালে আনা হয়।

এর মধ্যে তিনজনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- বরগুনা সদরের আমতলী নিমতলী এলাকার জাহানারা ও বরগুনা সদরের লেমুয়া খাজুরা এলাকার যমজ দুই বোন লামিয়া ও সামিয়া।

হাবিবুর বলেন, লাশগুলো সার্কিট হাউজ মাঠে নেওয়া হয়েছে। জানাজা শেষে বেলা ১২টার দিকে লাশ গণকবর দেওয়া হবে। বেলা ১১টার আগে কেউ মরদেহ শনাক্ত করলে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

“লাশগুলো বেশিরভাগ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারছেন না স্বজনরা। মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

এদিকে ঝালকাঠি জেলা প্রসাশক কার্যালয়ের সরকারী কমিশনার বশির গাজী বলছেন, তারা ঝালকাঠি থেকে ৩৬ জনের লাশ বরগুনায় পাঠিয়েছেন। আর একজনের লাশ পাঠানো হয়েছে বরিশাল থেকে।

বশির গাজী বলেন, শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে ঝালকাঠির সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে ৩৬ লাশ ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বরগুনা- ২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের কাছে হস্তান্তর করেন।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, এর মধ্যে চারজনের লাশ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এরা হলেন- বরগুনা জেলা পাথরঘাটা উপজেলার মৃত হোসেন আলীর ছেলে আব্দুল রাজ্জাক মাস্টার (৬২), বরগুনার বেতাগী উপজেলার আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. রিয়াজ হাওলাদার (৩৫), বরগুনার বামনা উপজেলার সঞ্জিব চন্দ্রের ছেলে স্বপ্লীল চন্দ্র (১৪), ও বামনা উপজেলার জাহানারা বেগম (৪৫)।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা সদরঘাট থেকে কয়েকশ যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছিল এমভি অভিযান-১০। চাঁদপুর, বরিশাল ও দপদপিয়া ঘাট পেরিয়ে লঞ্চটি যাচ্ছিল বেতাগী, শেষ গন্তব্য ছিল বরগুনা; শীতের রাতে যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন ঘুমে। 

রাত ৩টার দিকে কোনো এক সময় চলন্ত লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই অবস্থাতেই এগিয়ে যেতে থাকে অভিযান-১০, এক পর্যায়ে পুরো লঞ্চ পরিণত হয় অগ্নিকুণ্ডে।

প্রাণ বাজি রেখে সেই ঝাঁপ অনেককে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এগিয়ে গিয়ে তাদের তুলে এনেছেন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডও অংশ নিয়েছে উদ্ধার অভিযানে।

কিন্তু উপরের দুই তলার বন্ধ কেবিনে যারা ঘুমাচ্ছিলেন, তাদের অনেকের আর বের হওয়ার সুযোগ হয়নি। সেই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা।

শুক্রবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে পোড়া লঞ্চ আর নদী থেকে ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় দগ্ধ এক শিশুর। আর ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের।