ঢাকার মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
Published : 30 Jun 2021, 10:15 AM
ইমরান হোসেন নামের ২৫ বছর বয়সী ওই যুবক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বুধবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান।
তিনি বলেন, ইমরান হোসেনের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। বিস্ফোরণে ধসে পড়া রাখি নীড়ের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কেন্দ্রে কাজ করতেন তিনি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের আব্দুল মজিব ভুঁইয়ার ছেলে ইমরান স্ত্রী তামান্নাকে নিয়ে মগবাজারেই একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
তিন দিন আগের ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে মোট ৯ জনের মৃত্যু হল। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও দুজন।
তাদের মধ্যে ৩১ বছর বয়সী মো. রাসেল ছিলেন বেঙ্গল মিটে ইমরানের সহকর্মী। আর ৩৫ বছর বয়সী মো. নুরুন্নবী পেশায় ভ্যানচালক।
ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা দুজনই আইসিইউতে আছেন, শরীরের ৯০ শতাংশই দগ্ধ।
“বলতে গেলে তারা এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই রয়েছেন। যে কোনো মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটতে পারে।”
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। তাতে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা রাখি নীড়ের ধসে পড়ার দশা হয়।
বিস্ফোরণের ধাক্কায় রাস্তার উল্টো দিকে আড়ং, বিশাল সেন্টার, নজরুল শিক্ষালয়, রাশমনো হাসনপাতালসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ও যাত্রীরা।
ওই ঘটনায় আহত হন চার শতাধিক, তাদের বেশিরভাগই সে সময় রাস্তায় বা আশপাশের ভবনে ছিলেন। তাদের অধিকাংশই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া কাচে আহত হন।
ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তিনতলা ওই ভবনে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। তবে কেন, কীভাবে ওই বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু কেউ বলেননি।
বিস্ফোরণের পর সেই রাতেই মোট সাতজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরদিন তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে।
সেই সাতজন হলেন- কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), প্রাইভেটকারচালক স্বপন (৩৯), বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন (৩০), ভবনের নিচতলায় থাকা শরমা হাউজের পাচক ওসমান গনি তুষার (৩৫), সেখানে খেতে যাওয়া জান্নাত বেগম (২৩) এবং তার নয় মাসের মেয়ে সোবহানা।
বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আংশিক ধসে পড়া রাখি নীড়ের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ হাওলাদার। মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ভ্যানচালক নুরুন্নবী রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাজপুর গ্রামের ইসলাম মণ্ডলের ছেলে। ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকার একটি মেসে তিনি থাকতেন। আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার।
নুরুন্নবীর স্ত্রী পপি বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভ্যান চালিয়ে বাড্ডা থেকে ফেরার পথেই মগবাজারে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন তার স্বামী।
আর বেঙ্গল মিটের কর্মী রাসেলের পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে, বাবা কৃষক। লেখাপড়া করেছেন ঢাকায় চাচা মানারুল হকের কাছে থেকে।
মানারুল হক বলেন, “আমিই লালনপালন করছি। ছেলেটা আর বাঁচবে না ভাবলে কিছু ভালো লাগতেছে না। সহ্য করা মুশকিল।”