মগবাজার বিস্ফোরণ: ‘আমার আর কেউ নাই রে’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়েছেন মো. সুজন। ওই অবস্থায় স্বজনদের ফোন করা ছাড়া উপায় ছিল না তার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2021, 06:10 PM
Updated : 28 June 2021, 03:55 AM

ফোনে বারবার বলছিলেন, “আমার বউ-মেয়ে সব শেষ। আমার আর কেউ নাই রে, তোরা কে কোথায় আছোস হাসপাতালে আয়।”

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় সুজনের স্ত্রী জান্নাত বেগম (২৩) ও নয় মাসের মেয়ে সুবহানার প্রাণ গেছে।

ওয়্যারলেস গেইটে বিকট এক বিস্ফোরণে তিনতলা ওই ভবন ধসে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার, আহত হয়েছেন অনেকে।

স্ত্রী ও সন্তানের হঠাৎ মৃত্যুতে দিশেহারা সুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যায় মেয়ে সুবহানা আর ১৩ বছরের ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজার আড়ংয়ের উল্টো দিকে শর্মা হাউজে খেতে গিয়েছিলেন জান্নাত।

বিস্ফোরণের খবর শুনে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে স্ত্রীর লাশ পেয়েছেন। নয় মাসের মেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছে বলে স্বজনদের কাছে জানতে পেরেছেন।

২৫ বছর বয়সী জান্নাতকে রাত ৯টার দিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তার পুরো শরীর ধুলাবালি ভরা, ক্ষত আর রক্তও দেখা যাচ্ছিল। আহতদের ভিড় আর হাসপাতালের কোলাহল ছাপিয়েও তার কণ্ঠের আর্তি শোনা যাচ্ছিল।

ট্রলিতে শুয়ে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত যাওয়ার সময় জান্নাত বারবার শুধু একটি কথাই বলেছিলেন: “আমাকে বাঁচান, স্বামীকে ডাকেন।”

ঘণ্টা দেড়েক পর জান্নাতের স্বামী সুজন যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালেন, ততক্ষণে জান্নাত না ফেরার দেশে।

সুজন জানান, তার কিশোর শ্যালক রাব্বি আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল থেকে যখন ট্রলিতে করে জান্নাতের মৃতদেহ বের করা হচ্ছিল, তখন আর সুজনকে আটকে রাখতে পারছিলেন না কেউ।

স্ত্রীর মৃতদেহের কাছে গিয়ে বারবার তাকে ডেকে ওঠানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কান্না আর আহাজারিতে ভিজে ওঠে উপস্থিত অনেকের চোখের কোণ।

স্বজনেরা জানান, সুজন একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। শর্মা হাউজ নামের ওই রেস্তোরাঁ তাদের এক আত্মীয়ের। মেয়ে আর ভাইকে নিয়ে সন্ধ্যায় সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন জান্নাত।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো ওই তিনতলা ভবনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। তিনতলা ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে; আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো শুরু করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হয় অনেককে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের কারও কারও শরীর পুড়ে গেছে। তবে বেশিরভাগই আহত হয়েছেন বিস্ফোরণে ছিটকে যাওয়া কাচের আঘাতে।