সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দেড় যুগ আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাতজনকে জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 25 May 2021, 03:23 PM
যারা জামিন পেয়েছেন তারা হলেন- আইনজীবী আবদুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, গোলাম রসুল, জহুরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মো. মনিরুল ইসলাম।
বিচারিক আদালতের রায়ে আবদুস সাত্তার ও আব্দুস সামাদ সাড়ে চার বছরের সাজা হয়েছে।
আর গোলাম রসুল, জহুরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মো. মনিরুল ইসলামের সাজা হয়েছে চার বছর করে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ১৮ জনের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ তাদের চার মাসের জামিন দেয়।
বাকিদের বিষয়ে রোববার আদেশ বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন, শাহানারা পারভীন ও গাজী মহসীন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শাহীন মীরধা।
পরে আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, “১৮ জনের মধ্যে সাতজনকে চার মাসের জামিন দিয়ে জেলা দাদয়রা জজ আদালতকে এই সময়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে বলেছেন হাই কোর্ট। বাকি ১১ জনের বিষয়ে আদেশ রোববার।”
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বিডিনিউ জটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মনে করছি, যাদের জামিন দেওয়া হয়েছে তা আইনত ঠিক হয়নি। এফআইআরএ জামিনপ্রাপ্তদের নাম না থাকলেও সাক্ষীদের সাক্ষে তাদের নাম উঠে এসেছে। তাছাড়া রায় হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। দুই মাসের ব্যবধানে তাদের জামিন দেওয়ার বৈধ কারণ আছে বলে মনে করি না। যে কারণে এ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে যাব।”
ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়।
শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন।
ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
তখন সাতক্ষীরার আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।
ওই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
তদন্ত শেষে তখনকার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনের পৃথক ধারায় দেওয়া তিনটি অভিযোগপত্রের মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি। সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর ৫০ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং বিএনপিকর্মী আরিফুর রহমান ও রিপনকে সর্বোচ্চ দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া কলারোয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বাচ্চুকে নয় বছরের কারাদণ্ড এবং বাকি ৪৬ জনকে চার থেকে ছয় বছরের সাজা দিয়েছে আদালত।
বাকি দুটি মামলা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।