জঙ্গি সন্দেহে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে অনুসরণ করে আসা এক দম্পত্তিসহ নয় তরুণ-তরুণীর একটি দলকে গ্রেপ্তার না করে পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে র্যাব।
Published : 14 Jan 2021, 09:42 AM
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও আইজিপির কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। পরে তাদের পেশার ধরণ অনুযায়ী পুনর্বাসন করা হবে।
র্যাব তাদের এই কর্মসূচিকে বলছে ‘ডি-র্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’।
এসব তরুণ-তরুণীকে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার দর্শন থেকে সমাজের মূল ধারায় স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসাই এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বুধবার এক অনির্ধারিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, ওই নয়জনের মধ্যে দুজন নারী এবং সাতজন পুরুষ। তাদের কাউকে ছয়মাস, কাউকে দুইমাস ধরে অনুসরণ করা হচ্ছে।
“এরা কেউ ডাক্তার, কেউ আইটি বিশেষজ্ঞ, কেউ ছাত্র। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের এই দলের কেউ জেএমবি, কেউ আনসার আল ইসলামের সদস্য হয়েছে।
“জঙ্গি সেজেই তাদের সাথে মিশে পরে নজরদারিতে এনে তাদের পথটি যে ভুল, তা তাদের বোঝানো হয়েছে। তাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার এটা প্রথম ধাপ।”
এই নয়জনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে পুরনো একটি মামলা রয়েছে, বাকিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানান র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হন, তাদের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পরে জামিন পেয়ে যান। জামিন পেয়ে তারা আবার জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন।
“তাদের আবার গ্রেপ্তার করলে যে ধারণা নিয়ে তারা কাজ করছে, সেই অসত্য ধারণাটি ইস্পাত কঠিন হয়। ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হই।”
নিজের কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, একজন জঙ্গি হওয়ার আগে কোনো একটি সংগঠনের প্রতি সহমর্মিতা দেখায়, পরে সমর্থক হয়ে ওঠে। তারপর যে সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশ নেয়, তার ভেতরে উগ্রবাদের ধারণা পোক্ত হতে থাকে।
“এক পর্যায়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা অস্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। বায়াত গ্রহণ করে জঙ্গিবাদে লিপ্ত হয়।
“এ অবস্থায় তাদের মস্তিকে যে ধারণা বা মতবাদ বসে আছে, সেটা অস্ত্র দিয়ে নির্মূল করা যায় না। সেখান থেকে তাদের বুঝিয়ে বের করে আনা ছাড়া বিকল্প নেই। আর সেজন্য র্যাব ডি-র্যাডিকালাইজেশন না এই পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।”
তবে এই কর্মসূচি সফল করতে হলে বিভিন্ন অংশীজনদের পাশে থাকাটা জরুরি বলে মন্তব্য করেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “র্যাব এক্ষেত্রে মাত্র ২৫.৭ ভাগ করতে পারে, বাকিটা অন্যদের করতে হবে। আমরা তাদের জঙ্গি থেকে পৃথক করতে চাই।”
যারা আত্মসমর্পণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের কাউকে গাভী দিয়ে, কাউকে ট্রাক্টর দিয়ে, কাউকে টাকা দিয়ে, কাউকে কম্পিউটার দিয়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার।
তিনি বলেন, “এই নয়জনের পুনর্বাসনের কাজে আলেম, ডাক্তার, মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নেওয়া হয়েছে।”
আরো ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি’ র্যাবের নজরদারিতে রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, দ্বিতীয় ধাপে তাদের পুনর্বাসনের এই প্রক্রিয়ায় আনা হবে।