দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়া তরুণদের ৩০টি সংগঠনকে এ বছর জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হল।
Published : 17 Nov 2020, 09:17 PM
মঙ্গলবার রাত ৮টায় ইয়াং বাংলা আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এই ৩০ সংগঠনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
এ বছর প্রথম পর্বে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতে ১৬টি যুব সংগঠন এবং দ্বিতীয় পর্বে সমন্বিত সামাজিক উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে ১৪টি যুব সংগঠন পেয়েছে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’।
বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পর সজীব ওয়াজেদ জয় যুব সংগঠনগুলোকে নিয়ে বলেন, “আমাদের মতে, আউটস্ট্যান্ডিং সংগঠন। দেশের মানুষকে, দেশকে ও সাধারণ মানুষকে সেবা করার কাজে তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রত্যেকবার এ সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দেখে আমি নিজেই অনুপ্রাণিত হই।
“দেশের মানুষের জন্য …যারা কষ্টে আছে, যারা দরিদ্র শিশু, ডিজ্যাবল তাদেরকে যে সেবা করে যাচ্ছে- তাদের জন্য আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।”
দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা যুব সংগঠনগুলোর নানামুখী উদ্যোগের প্রশংসায় সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আমাদের দেশে কেন যেন কিছু মানুষের একটা স্বভাব আছে যে, শুধু সমস্যা…এ সমস্যা ওই সমস্যার নালিশ করা। আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের দেশ-এ দেশে এটা ভালো হচ্ছে না, ওটা ভালো হচ্ছে না, এটা খারাপ হচ্ছে, এখানে পিছিয়ে আছি- এই নালিশ তারা সারাক্ষণ করে যায়।
“সেখানে এই যে ১৬টি সংগঠন এরা সমস্যা দেখছে, এরা নিজেদের চেষ্টায় নিজেদের মেধায় নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে সে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা কিন্তু কোনো বিরাট সংগঠন নয়। এই যে ছোট ছোট সংগঠন, মাত্র হয়ত একজন ব্যক্তি, হয়ত একজন যুবক গ্রামে বসে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারা নিজের চিন্তা, ধারণা দিয়ে সমাজের মানুষকে সাহায্য করছে। সে কিন্তু ওখানে বসে শুধু নালিশ করছে না। সে পরিশ্রম করে যাচ্ছে সমস্যাটা সমাধান করতে। এটাই হচ্ছে আমাদের কাজ।”
দেশ ও নিজ সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া তরুণদের স্বীকৃতি দিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। বিগত তিনটি আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও দেশ গঠনে কাজ করে যাওয়া তরুণদের ৬০০ সংগঠন থেকে শীর্ষ ৩০ সংগঠনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু।
এবার জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন করে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের ৬০০ সংগঠন। সেসব সংগঠন থেকে বাছাই করে ৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত আসরের জন্য মনোনীত করা হয়। সেই ৪৭টি যুব সংগঠন থেকে সেরা ৩০টির নাম ঘোষণা করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়ন, দরিদ্রদের উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা, পরিবেশ সুরক্ষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আবেদনকারী সংগঠনগুলো থেকে বাছাই করে ৫০ সংগঠনকে রাখা হয় প্রাথমিক জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২০ বিজয়ীর তালিকায়।
সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরির আওতায় ছয়টি সাব ক্যাটাগরি- নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়ন, ক্ষতিগ্রস্ত ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষমতায়ন, চরম দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন ও যুব উন্নয়নের জন্য ১৬টি সংগঠনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
শিশু অধিকারে এবার পুরস্কার পেয়েছে নাটোরের প্রতিষ্ঠান হ্যাপি নাটোর ও রাজশাহীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়।
চরম দরিদ্রদের ক্ষমতায়নে পুরস্কার পেয়েছে পটুয়াখালীর অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন ও সিলেটের মিজারেবল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
ক্ষতিগ্রস্ত ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষমতায়নে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে পিরোজপুরের হাতেখড়ি ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রামের এক টাকায় শিক্ষা ও বরিশালের গুড ফিল্ম।
যুব উন্নয়নে পুরস্কার পেয়েছে রাঙামাটির উন্মেষ, চাঁদপুরের ইগনাইট ইয়ুথ ফাউন্ডেশন, চাঁদপুরের আইটেক স্কুল ও ঢাকার পজিটিভ বাংলাদেশ।
নারীর ক্ষমতায়তনে ঢাকার দেশি বলারস, বরিশালের ইয়ুথ ফর চেঞ্জ বাংলাদেশ এবার জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বে সমন্বিত সামাজিক উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি কার্যক্রম, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কার্যক্রম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম, সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগ এবং দুর্যোগ মোকাবিলা ও ঝুঁকি হ্রাস এই ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি কার্যক্রমে পুরস্কার পেয়েছে ঢাকার ব্লাডমেন হেলথ কেয়ার, ঢাকার মাস্তুল ফাউন্ডেশন, নোয়াখালীর ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ আর্মি, চট্গ্রামের সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজান এবং ঢাকার মিশন সেইভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কার্যক্রমে পুরস্কার পেয়েছে ঢাকার প্লাস্টিক ইনিশিয়েটিভ নেটওয়ার্ক (পিআইএন) এবং ঢাকার ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রমে পুরস্কার পেয়েছে জামালপুরের সাইকিওর অর্গানাইজেশন, নাটোরের দীপ মেডিকেল সার্ভিসেস ও দীপাশা ফাউন্ডেশন।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগে পুরস্কার পেয়েছে কক্সবাজারের পহরচাঁদা আদর্শ পাঠাগার, মৌলভীবাজারের উত্তরণ যুব সংঘ ও লক্ষ্মীপুরের সিনেমা বাংলাদেশ।
দুর্যোগ মোকাবিলা ও ঝুঁকি হ্রাসে পুরস্কার পেয়েছে নোয়াখালীর ফুটস্টেপ বাংলাদেশ এবং কুড়িগ্রামের সেইফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন।
ইয়াং বাংলা জানিয়েছে, ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের হাতে সনদ, ক্রেস্ট ও ল্যাপটপ পৌঁছে দেওয়া হবে।
সমাজের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তরুণদের ১৩০ সংগঠনকে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন থেকে কাজের স্বীকৃতি পেয়েছে।