কুর্মিটোলায় ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলার রায় ১৯ নভেম্বর

চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় একমাত্র আসা‌মি মজনুর সাজা হবে কি না, তা জানা যাবে আগামী ১৯ নভেম্বর।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2020, 01:49 PM
Updated : 12 Nov 2020, 01:49 PM

আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন এবং দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব‌্যুনা‌লের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার রায়ের এই তারিখ ঠিক করে দেন।

যুক্তিতর্ক শুনানিতে মজনুর আইনজীবী ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইডের রবিউল ইসলাম রবি বলেন, মজনু এ মামলার ‘আসল আসামি নন’। ধর্ষণের ওই ঘটনার কোনো চাক্ষুস সাক্ষী নেই। রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি প্রমাণ করতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে।

অন্যদিকে  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রের অনেক খরচ হয়েছে। স্বভাবিকের চেয়ে বেশি পুলিশ, বেশি সতর্কতা গ্রহণ এবং খুব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

“যদি ভিকটিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়ে অন্য কোনো প্রান্তিক শ্রেণির কেউ হত, তবে এত আয়োজন হত না। আমরা চাই সকল পেশা বা সমাজের সকল স্তরের নারী যেন নিরাপদে রাস্তায় হাঁটতে পারে। আর মজনুর মতো সামাজিক মর্যাদার মানুষের জন্য কেবল নয়, যেসব মামলায় সমাজের রাঘব বোয়াল, ধনী, তথাকথিত অভিজাত শ্রেণির আসামি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও বিচারের এ রকম আয়োজন থাকলে আমাদের ভালো লাগত।”

আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে বিচারক মজনুকে বলেন, “আপনি অনেক দিন আমার সঙ্গে অনেক কথা বলতে চেয়েছেন। আাজ আপনাকে বলার অনুমতি দিচ্ছি।”

এ কথায় কাঠগড়ায় দঁড়ানো মজনু বলেন, “আমার মা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নাই। আমাকে মায়ের কাছে যাইতে দ্যান। আমি এই কাম করি নাই। আমারে ছাইড়া দ্যান।”

ভিকটিম আদালতে আসামি শনাক্ত করার সময় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গ টেনে মজনু বলেন, “সে (ভিকটিম) বলছে যে আমার দুই দাঁত ভাঙ্গা, আসলে আমার ৭/৮টা দাঁত ভাঙ্গা।”

ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোন এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পর সেই সূত্র ধরে তদন্ত করে পুলিশ মজনুকে গ্রেপ্তার করেছিল। আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি দাবি করেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার কখনও ‘দেখা হয়নি’, ওই মোবাইল তিনি ‘কেড়েও নেননি’। সেটি তিনি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু মামলাটিতে খুব ঘন ঘন তারিখ পড়েছে, সে কারণে বিচারকের সকল সাক্ষীর বক্তব্য মনে ছিল। ফলে আমাকে যুক্তিতর্ক শুনানিতে তেমন কিছু বলতে হয়নি।”

এ বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা বাস স্টপেজে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে ধরে সড়কের পাশের ঝোঁপের আড়ালে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। সে সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন ওই তরুণী।

জ্ঞান ফেরার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে। ধর্ষণের ওই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করে।

ওই তরুণীর কাছে বর্ণনা শুনে এবং তার কাছ থেকে ধর্ষণকারীর নিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ৮ জানুয়ারি মজনুকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওই শিক্ষার্থী পরে মজনুকে ‘ধর্ষণকারী’ হিসেবে শনাক্ত করেন এবং রিমান্ড শেষে ১৬ জানুয়া‌রি মজনু আদালতে স্বীকারো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়।

দুই মাস পর গত ১৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডি‌বির প‌রিদর্শক আবু বকর সি‌দ্দিক আদালতে অভি‌যোগত্র দা‌খিল ক‌রেন। তাতে শুধু মজনুকেই আসামি করা হয়। ভুক্তভোগীর পোশাক ও মোবাইল ফোনসহ ২০টি আলামত জমা দেওয়া হয় আদালতে।

এরপর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব‌্যুনালে বদলি করা হয়। গত ২৬ অগাস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার এ মামলায় মজনুর বিচার শুরুর আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য ও জেরা গত ৫ নভেম্বর শেষ হয়। মজনুর পক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষ্য দেননি।

পুরনো খবর