বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।
Published : 08 Mar 2020, 03:07 PM
আক্রান্ত তিনজনই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ইতালির দুটি শহর থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে একজনের সংস্পর্শে এসে পরিবারের আরেক নারী সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। সবার বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, “তাদের সবার উপসর্গ মৃদু। একজনের শরীরে ৯৯ ডিগ্রির (ফারেনহাইট) মতো জ্বর, আরেকজনের কাশি। আরেকজনের জ্বর ও কাশি দুটোই ছিল। তাদের সবার অবস্থাই স্থিতিশীল। তিনজনকেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
ওই তিনজনের সংক্রমণের বিষয়ে শনিবার নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “দুজন দেশে আসার পর তাদের উপসর্গ দেখা দেয়। আমাদের হটলাইনে ফোন দিলে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাই। তাদের ফল পজেটিভ আসে।
“তাদের কন্টাক্টে থাকা চারজনকে পরীক্ষা করেছি। একজন পজেটিভ। বাকিরা নেগেটিভ এসেছে। সতর্কতা হিসেবে তাদেরও আমরা কোয়ারেন্টিনে রেখেছি।”
নভেল করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ এড়াতে চাইলে ঘন ঘন হাত ধোয়া ভালো। সেই সঙ্গে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীও নিরাপদ রাখতে হবে।
হটলাইন করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে যোগাযোগের জন্য হটলাইন চালু করেছে আইইডিসিআর। তাতে ফোন করলে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন আইইডিসিআরের কর্মীরা। নম্বরগুলো হলো: ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১। |
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, যা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ১০০ দেশ ও অঞ্চলে। এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯।
বিশ্বজুড়ে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৫ জনের।
এর আগে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইতালিতে সাতজন বাংলাদেশি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম কারও মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়লো।
তবে এ রোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার বা আতঙ্কিত হওয়ার মত পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি বলে আশ্বস্ত করে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “সবাই মিলে প্রতিরোধ করতে হবে। এ মুহূর্তে স্কুল-কলেজ বন্ধ করার মত কোনো প্রয়োজন নেই। সর্দিকাশি প্রতিরোধে যে নিয়ম, সেগুলো মেনে চলতে হবে।
“আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলবেন না। কারও সঙ্গে করমর্দন, কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।”
এ মুহূর্তে জনসমাগম এড়িয়ে চলা ছাড়া আর কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন আইইডিসিআরের পরিচালক।
তিনি বলেন, “আমরা যেভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি তাতে কারো চিন্তা করার কারণ নেই। আমরা অবশ্যই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা চাই। সমগ্র দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করি।
“আমরা কন্টাক্ট ট্রেসিং করছি এবং ট্রেসিং করে আমরা শনাক্তও করেছি। এই মুহূর্তে রোগী এবং তাদের সংস্পর্শে যারা ছিল তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। তাদের কন্টাক্টের পুরো তালিকা আমাদের কাছে আছে। আমরা মনে করি না আলাদা করে কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ মুহূর্তে যারা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাদের দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করছে আইইডিসিআর। বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের বিষয়ে সবগুলো দেশের দূতাবাসের সঙ্গে আইইডিসিআরের যোগাযোগ হচ্ছে বলে জানান ডা. ফ্লোরা।
আরও পড়ুন