করোনাভাইরাস: কতটা সুরক্ষা দিচ্ছে আপনার মাস্ক?

চীনের এক শহর থেকে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ধরনের এক ভাইরাস- নভেল করোনাভাইরাস। হাঁচি-কাশি-সর্দির মাধ্যমে এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে বলে অনেক দেশেই এখন সবার মুখে মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2020, 07:41 AM
Updated : 29 March 2020, 06:21 PM

পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ তো বটেই, পর্যটকদের ঘোরাফেরা বেশি এমন পশ্চিমা শহরগুলোতেও এখন মাস্কের বিক্রি বেড়ে গেছে। মাস্কের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেইজিংয়ের একটি ওষুধের দোকানকে জরিমানাও করা হয়েছে।  

কিন্তু এসব মাস্ক বাতাসে ভেসে বেড়ানো নভেল করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে?

যে শহরে ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেখানে বাইরে বের হওয়ার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো, কারণ তাতে হাত থেকে মুখে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমতে পারে। আবার যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরও মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ, যাতে তাদের হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমে।

তবে ওই মাস্ক বাতাসে ভেসে বেড়ানো করোনাভাইরাস আটকে দিতে পারবে, এমন ভরসা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন না।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ডা. ডেভিড ক্যারিংটন বলছেন, “যেসব ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ভেসে বেড়ায় সেগুলো থেকে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক খুব বেশি সুরক্ষা দিতে পারে না। এ ধরনের মাস্ক হয় ঢিলেঢালা, বাতাস ফিল্টার করার কোনো ব্যবস্থাও  থাকে না। তাছাড়া মাস্ক পড়লেও চোখ থাকে খোলা। আর বেশিরভাগ ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেই ছড়ায়।”

বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। তারা বলছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের শুরুটা বেশ পুরনো হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর প্রবণতা বেড়েছে বেশি।

১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু  মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বে ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। মূলত তখন থেকেই হাসপাতালের বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার শুরু হয়। গণপরিবহনে চড়ার সময় এবং ভ্রমণেও অনেকে এই মাস্ক পরা শুরু করেন।   

কাগজ বা কাপড়ের তৈরি সাদা, নীলচে বা সবুজ রঙের যেসব সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করলে রাস্তায় ধুলা আর ধোঁয়া থেকে কিছুটা রেহাই মিলতে পারে। তবে এসব মাস্ক বাতাসে ভাসমান ভারী বস্তুকণা ঠেকাতে পারে না।

ভারী বস্তুকণা আটকাতে পারে এরকম সবচেয়ে জনপ্রিয় মাস্ক হল এন ৯৫, যার দাম বাংলাদেশে একশ থেকে তিনশ টাকা।

নিউসায়েন্টিস্ট ডটকম ও বিজনেস ইনসাইডারের খবর বলছে, এই মাস্ক ২.৫ পিএম (পার্টিকুলেট ম্যাটার) আকারের ভারী কণার ৯৫ শতাংশ আটকে দিতে পারে। ভাইরাসের ব্যাস ০.৩ মাইক্রন পর্যন্ত হলেও তা ঠেকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস যে আরও ছোট, ব্যাস মাত্র ০.১২ মাইক্রন!

যুক্তরাজ্যের গণস্বাস্থ্য দপ্তরের সংক্রমক রোগ বিষয়ের প্রধান ড. জেক ডানিং বিবিসিকে বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা চালু আছে যে নাক-মুক ঢেকে রাখার এই মাস্কগুলো হয়ত সত্যি কাজে। তবে হাসপাতালের বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর উপকারিতা প্রমাণিত কিছু নয়।”

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে সার্জিক্যাল মাস্কের পাশাপাশি গেঞ্জি বা সুতি কাপড়ের তৈরি এক ধরনের মাস দোকানে বা ফেরি করে বিক্রি হয়, যা মানুষ একটানা কয়েকবার এবং ধুয়ে ধুয়ে বেশ কিছুদিন ব্যবহার করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো মাস্ক টানা কয়েকদিন ব্যবহার করলে তা উল্টো আরও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অপরিষ্কার ওই মাস্কই হয়ে উঠতে পারে জীবাণুর বাসা।

নিউ সাউথ ওয়েলসে ২০১৬ সালে চালানো এক গবেষণার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ প্রতি ঘণ্টায় নানা কারণে অন্তত ২৩ বার নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করে। এটা মানুষের সাধারণ অভ্যাস। এরা এই অভ্যাস থেকেই করোনাভাইরাসের মত রোগজীবাণুর সংক্রমণ ঝুকি থাকে বেশি, যেগুলো মূলত শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। 

বেলফাস্টের কুইনস ইউনিভার্সিটির এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন বিষয়ের গবেষক ড. কোনোর বামফোর্ড বিবিসিকে বলেন, সাধারণ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

যেমন হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে ফেলতে হবে, তারপর সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে হাত। সাবান ও গরম পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধুলে জীবাণু থাকার ঝুঁকি কমবে। আর না ধোয়া হাত যেন কোনোভাবেই মুখ, চোখ বা নাকের সংস্পর্শে না যায়। পাশাপাশি সুস্থ জীবনযাপনের সাধারণ নিয়মগুলোও মানতে হবে।

সবকিছুর পরও যদি কারও মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়, আতঙ্কিত না হয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।