ঢাকা সিটি ভোট: লড়াইয়ে থাকলেন ৭৫৮ প্রার্থী

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ে ৭৫৮ জনের থাকা চূড়ান্ত হল।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2020, 04:50 PM
Updated : 15 Jan 2020, 07:01 AM

বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরুনোর পর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দপ্তর থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।

শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে এই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামতে পারবেন। ১৮ দিনের প্রচার শেষে ৩০ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তিনটি পদে মোট ১ হাজার ৩৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

এরপর ইসির বাছাইয়ে ঝরে পড়েন ৪৫ জন। তবে আপিলের পরে প্রার্থিতা ফিরে পান কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী। সব মিলিয়ে বৈধ প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ১৯ জন।

এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় এলে দুই সিটিতে মোট ২৬৮ জন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। এদের মধ্যে উত্তরে ১২৩ জন ও দক্ষিণে ১৪৫ জন। এরা সবাই কাউন্সিলর প্রার্থী, মেয়র পদে কেউ সরেননি।

এরকম মহড়া নিষিদ্ধ হলেও তা ঘটছে কয়েক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়

মেয়র পদে লড়াইয়ে এখন উত্তরে রয়েছেন ৬ জন, দক্ষিণে রয়েছেন ৭ জন।

উত্তরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, উত্তরে সাধারণ কাউন্সিলর ২৫১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন লড়াইয়ে রয়েছেন।

এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।

দক্ষিণের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান জানান, সেখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

দক্ষিণে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২০ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।

দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে অন্যদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনার পাশাপাশি কয়েকজন ‘চাপে’ পড়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন।

কাউন্সিলর পদে কোনো ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকলে তাকে শুক্রবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।

মেয়র প্রার্থী

উত্তরে- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, সিপিবির আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান ও পিডিপির শাহীন খান।

দক্ষিণে- আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান, এনপিপির বাহারানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ।

শুক্রবার থেকে প্রচার

শুক্রবার সকালে প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। ফলে সরগরম হয়ে উঠবে রাজধানী। যদিও বিধি লঙ্ঘন করে আগে থেকেই বিভিন্ন প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন। এনিয়ে ইসিতে অভিযোগও হয়েছে।

প্রচারের শুরুর দিনে প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা তাদের কর্মসূচিও ঠিক করে ফেলেছেন।

উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সকালে প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

সন্ধ্যায় নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মনিপুর বয়েজ স্কুলে মতবিনিময়ে অংশ নেবেন তিনি।

উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে উত্তরা ৭নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার পর রবীন্দ্র স্মরণী থেকে শুরু করে কামারপাড়া পর্যন্ত জনসংযোগ করবেন। কামারপাড়া হয়ে দিয়াবাড়ীতেও জনসংযোগ করবেন তিনি।

দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনে প্রচার চালাবেন।

দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রতীক নিয়ে জুরাইন কবরস্থানে বাবা সাদেক হোসেন খোকার কবর জিয়ারত করবেন। এরপর বাইতুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়ে ওই এলাকায় গণসংযোগ চালাবেন।

দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়

মসজিদ-মন্দিরে ভোটের প্রচার নয়

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, প্রার্থীদের কোনোভাবে মসিজিদ-মন্দিরে ভোটের প্রচার না চালানোর জন্যে বলা হয়েছে। আচরণবিধি মেনে কোনোভাবে উপাসানালয়ে ভোট না চাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

আচরণবিধির ২০ ধারায় বলা হয়েছে- কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো দল, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসানালয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

জানতে চাইলে উত্তরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “শুক্রবারকে সামনে রেখে আমরা ইতোমধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের আচরণ বিধি মেনে প্রচারণা চালানোর জন্যে বলে দিয়েছি। কোনোভাবে মসজিদ-মন্দিরে বা ধর্মীয় উপাসানালয়ে ভোট চাইতে পারবেন না- জানিয়ে দিয়েছি।”

বিধি পালনে কঠোরতা চান মাহবুব তালুকদার

সিটি নির্বাচনে সাংসদদের প্রচার কাজে অংশ নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন নির্বাচনের কাছে ‘আন-অফিসিয়াল নোট’ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তাতে এ কমিশনার লেখেন, সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রচারে অংশ নিলে সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বিনষ্ট হবে। অন্যদিকে নির্বাচনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। নির্বাচন আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করা আবশ্যক।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম ও দক্ষিণের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনকে এ চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়।