তাদের তথ্য মতে, এ বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অগাস্ট মাসে, রোগীর সংখ্যা ছিল অর্ধ লক্ষাধিক।
মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এবার অন্তত ২৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে ১২৯ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে তারা।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডা. বোরহান উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিসেম্বর এখনও বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে ১১ মাসে লাখ ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের এই সময়ের তুলনায় ১০ গুণ।
ঢাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস এজিপ্টি মশা। মশাবাহিত এই রোগ বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০০০ সালে, সে সময় এই রোগে মারা যান ৯৩ জন। তিন বছর পর থেকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমতে থাকে এবং কয়েক বছর এতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে আসে।
তবে গত বছর আবার বড় পরিসরে দেখা দেয় ডেঙ্গু, ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ২৬ জনের মৃত্যু হয় সরকারি হিসাবে।
এ বছর মে মাস থেকেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, জুন ও জুলাইয়ে ক্রমশ বেড়েছে অগাস্টে তা মারাত্মক রূপ নেয়। তখন সমালোচনার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক তৎপরতা নেয়। দুই বেলা ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়।
এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমলেও সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. বোরহান উদ্দিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডেঙ্গুর জন্য জুলাই-অগাস্ট সময় ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এখন আবহাওয়া শুকনো হয়েছে, ডেঙ্গু মশা বিস্তারের ঝুঁকিও কমেছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় প্রভাব কিন্তু রয়ে গেছে। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তেমন ঝুঁকি নেই। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে।”
মাসওয়ারি সংখ্যা তুলনা করে এ চিকিৎসক জানান, গেল বছর নভেম্বরে রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৯২ জন, সেখানে এ বছর এই মাসে তার তিন গুণেরও বেশি। আর চলতি অগাস্টে প্রতিদিনই গড়ে আড়াই হাজার করে আক্রান্তের রেকর্ড রয়েছে।
এ অবস্থা থেকে নভেম্বরের শেষ দিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ৩৭ জন ও ঢাকার বাইরে ৩৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল এর সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান,
>> ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ নভেম্বর মোট ভর্তি রোগী ১,০০,০২১ জন।
>> ছাড়প্রাপ্ত রোগী ৯৯,৩০৬ জন।
>> বর্তমানে সারা দেশে ভর্তি রোগী ৪৫১ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ২৫১ জন ও ঢাকার বাইরে ২০০ জন।
>> গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগী ৭৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৭ জন ও বাইরে ৩৬ জন।
>> রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এরমধ্যে পর্যালোচনা করে ১২৯ জনের ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
>> সাল, আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা- ২০০০: আক্রান্ত ৫ হাজার ৫৫১ জনের মধ্যে মৃত্যু ৯৩ জন, ২০০১: ২ হাজার ৪৩০ জনের মধ্যে ৪৪ জন, ২০০২: ৬ হাজার ২৩২ জনের মধ্যে ৫৮ জন, ২০০৩: ৪৮৬ জনের মধ্যে ১০ জন, ২০০৪: ৩ হাজার ৪৩৪ জনের মধ্যে ১৩ জন, ২০০৫: ১ হাজার ৪৮ জনের মধ্যে ৪ জন, ২০০৬: ২ হাজার ২০০ জনের মধ্যে ১১ জন, ২০০৭ থেকে ২০১০: শূন্য;
২০১১: ১ হাজার ৩৫৯ জনের মধ্যে ৬ জন, ২০১২: ৬৭১ জনের মধ্যে ১ জন, ২০১৩: ১ হাজার ৭৪৯ জনের মধ্যে ২ জন, ২০১৪: শূন্য; ২০১৫: ৩ হাজার ১৬২ জনের মধ্যে ৬ জন, ২০১৬: ৬ হাজার ৬০ জনের মধ্যে ১৪ জন, ২০১৭: ২ হাজার ৭৬৯ জনের মধ্যে ৮ জন এবং ২০১৮: ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জন।
এখনও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া নিয়ে ডা. বোরহান উদ্দিন বলেন, “যেহেতু বৃষ্টি নেই, শুকনো আবহাওয়া- সেজন্য প্রকোপ কম। তবে ডেঙ্গুর বাহক আক্রান্ত রোগীকে কামড়ালে তার মাধ্যমে রোগ ছড়াচ্ছে। এজন্যে বর্ষা চলে যাওয়ার পরও প্রকোপ একেবারেই বন্ধ হয়নি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক কর্মসূচি ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা যে শহরে বা যে এলাকায় একবার বিস্তার করে, সে এলাকায় আর ‘নিস্তার নেই’। কারণ এডিস মশার ডিম শুকনা পরিবেশেও নয় মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকে, নষ্ট হয় না। আর যখনই স্বচ্ছ পানির সংস্পর্শে আসে তখন তা লার্ভা হয়; রূপ নেয় পরিপূর্ণ মশায়।