রোগটির প্রকোপ কমানোর নিয়ামক হিসেবে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এইডিস মশা নিধনে সফলতা, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বিশেষজ্ঞরা বললেও কবে নাগাদ কমতে পারে- সে প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি তাদের কাছ থেকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা গেছে, জুনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ৮৮৪ জন। জুলাই মাসে তা বেড়ে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে দাঁড়ায়।
আর অগাস্টের ১৯ দিনে সারাদেশের হাসপাতালগুলোয় ৩৬ হাজার ৩৩৬ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু তথ্য থাকলেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত ১৭১ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে।
এর আগে ২০০০ সালে সারাদেশে সবচেয়ে বেশি ৯৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিল।
২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ পর্যবেক্ষণ করে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, জুনে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়, যা ব্যাপকতা পায় পায় সেপ্টেম্বরে। আর অক্টোবরে তা কমতে থাকে। সে হিসাবে ডেঙ্গুর ‘পিক টাইম’ এখনও শুরু হয়নি।
“একটা ফ্যাক্টর হচ্ছে আবহাওয়া কেমন থাকে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এইডিস মশার হ্রাস-বৃদ্ধির একটা সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আমরা কিভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম। মশক নিয়ন্ত্রণে সফলতার ওপর নির্ভর করছে যে ট্রেন্ডটা কি হবে।”
মশার প্রজননস্থলগুলো ধ্বংসে সফলতা না এলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে বলে গত মাসেও সতর্ক করেছিলেন তিনি।
সেই সফলতা কতটুকু জানতে চাইলে সেব্রিনা বলেন, “এখন পর্যন্ত মনে হয় ভালোই কন্ট্রোল হচ্ছে। যদিও এখনও অনেক এরিয়া আছে যেখানে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে কার্যক্রম আগের তুলনায় জোরদার হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।”
ভারি বৃষ্টিপাত এইডিস মশার লার্ভা নিধনে ভূমিকা রাখলেও এবার সে ধরনের বৃষ্টিপাত হয়নি। সেপ্টেম্বরেও এমন বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান।
“ঢাকায় যদি একদিনে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হত তাহলে এইডিস মশার আশি ভাগ লার্ভা ভেসে যেত,” বলেন এই আবহাওয়াবিদ।
বর্তমানে যে ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করছে তা মশার প্রজননের জন্য খুবই উপযোগী বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারও।
তবে এবার সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ খুব একটা বাড়বে না বলে মনে করেন এই কীটতত্ত্ববিদ।
সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সম্ভবত ডেঙ্গুর প্রকোপ ‘স্ট্যাবল’ থাকবে। এটা এইডিস মশার জন্য বেশ ভালো পরিবেশ। কিন্তু যেহেতু ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা ধরনের কার্যক্রম চলছে, সরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে, জনগণও সচেতন হচ্ছে এ কারণে হয়তো ডেঙ্গুর প্রকোপ খুব বাড়বে না।”
“এবার ডেঙ্গু সিজনটা যেহেতু আর্লি রেইজ হয়েছে আর অগাস্টেই এটা অনেক ছড়িয়েছে, এটাকেই আমরা পিক মনে করছি। এবার আস্তে আস্তে কমে যাবে বলে আশা করছি।”
২০০৮ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত আইইডিসিআরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকে। এরমধ্যে অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। অক্টোবরের দিকে রোগীর সংখ্যা কমেছে।
২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ওঠানামা করেছে। তবে ২০১৪ সালের পর প্রতি বছর অগাস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল।
২০১৫ সালের অগাস্টে ৭৬৫, সেপ্টেম্বরে ৯৬৫, ২০১৬ সালের অগাস্টে ১৪৫১, সেপ্টেম্বরে ১৫৪৪, ২০১৭ সালের অগাস্টে ৩৪৬, সেপ্টেম্বরে ৪৩০ এবং ২০১৮ সালের অগাস্টে ১৭৯৬, সেপ্টেম্বরে ৩০৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হয়েছিল।