বাবা কোথায় আছে সেটা না জানলেও হাসানের শিশুমন মন হয়ত এখনও বিশ্বাস করে তার বাবা একদিন ঠিকই বাড়ি ফিরবে।
সাড়ে তিন বছর আগে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া বাবা সাইফুল ইসলাম চৌকিদারকে নিয়ে ছোট ছেলে হাসানের এমন অনুভূতির কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে সেখানকার পাচক সাইফুলও সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন।
ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিহত জঙ্গিদের সঙ্গেও সাইফুলকেও আসামি করা হয়েছিল। পরে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা বা হলি আর্টিজানে প্রত্যক্ষ হামলার যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অভিযোগপ্রত্রে বলা হয়, “তারা দুজনই হলি আর্টিজান বেকারির স্টাফ এবং তাদের কারোরই সন্ত্রাসী কার্যের সাথে জড়িত বা হলি আর্টিজানে প্রত্যক্ষ হামলাকারী/সন্ত্রাসীদের সাথে কোনো কানেকশন ছিল না। তারা দুঘর্টনার শিকার মাত্র।”
শরীয়তপুরের নড়িয়ার কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সাইফুল। ১০ বছর জার্মানিতে থাকার পরে দেশে ফিরে হলি আর্টিজানে যোগ দিয়েছিলেন সাইফুল। সেখানে পিৎজা শেফ হিসেবে কাজ করছিলেন দেড় বছর ধরে।
হালি আর্টিজানে হামলার খবর গণমাধ্যমে প্রচার হতে দেখে সাইফুলকে ফোন করেন তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী সোনিয়া আকতার। সাড়া না পেয়েই পরিবারে শুরু হয় আহাজারি।
সত্তোরর্ধ মা সমেরা বেগম সে সময় ছুটে যান ঢাকায়। গুলশানে ঘটনাস্থলে মোবাইল ফোনে ছেলের ছবি সাংবাদিকদের দেখিয়ে তিনি সাইফুলের খোঁজ জানতে চান।
এদিকে হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে পাঁচটি লাশের ছবি সাংবাদিকদের পাঠায় পুলিশ। সেই ছবি গণমাধ্যমে আসার পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা ব্যক্তিকে সাইফুল বলে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি সাইফুলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সোনিয়া বেগম শিশু হাসানকে নিয়ে দরজার সামনে বসে আছেন। কথা বলতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনিয়া।
শিশু হাসানকে দেখিয়ে বলেন, “সব সময় বলে আমার আব্বু ঢাকায় আছে, কখনও বলে আব্বু বিদেশে আছে । বাড়ির ওপর দিয়ে হেলিকপটার উড়ে গেলে বলে আব্বু হেলিকপ্টারে আসবে। কখনও নুতন পোশাক কিনে দিলে বলে আব্বু পাঠাইছে।”
সাইফুলের মা সমেরা বেগম বলেন, “আমার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাই আমরা লাশটা ফেরত চেয়েছিলাম, কিন্তু লাশ আমাদের ফেরত দেয়নি। এতো কিছু করার পরেও লাশ যখন পাইনি, এখন আর কি বলব? আর লেখালেখি করে কি লাভ হবে?”
সাইফুলের মৃত্যুর পর কাপড় সেলাই আর ও আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় তিন সন্তানতে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন সোনিয়া। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সামিয়া ষষ্ঠ এবং ইলমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।
পুরনো খবর