তারা বলছেন, যে পাঁচটি লাশের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের একজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার দেড় বছর ধরে ওই ক্যাফেটিরই শেফ হিসেবে কাজ করছিলেন।
পাঁচজনের মধ্যে সাইফুলের পরনে যে পোশাক রয়েছে, তা শেফরাই পরে থাকেন। তা দেখে ফেইসবুকেও তাকে নিয়ে পুলিশের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার ওই ক্যাফেতে একদল বন্দুকধারী ঢুকে বিদেশিসহ সব গ্রাহক ও কর্মীদের জিম্মি করে। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে হামলাকারীদের হত্যা করা হয়।
অভিযান শেষে আইএসপিআর সংবাদ সম্মেলনে জানায়, অভিযানে ছয়জন হামলাকারী মারা পড়েছে, ধরা পড়েছে একজন। আর অভিযানের আগে ২০ জনকে হত্যা করে হামলাকারী। শুরুতে মারা যান দুই পুলিশ সদস্য।
হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজন চিহ্নিত জঙ্গি বলে আইজিপির বক্তব্যের পর রাতে পুলিশ পাঁচটি লাশের ছবি সাংবাদিকদের পাঠায়।
অন্যদিকে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে আইএসের নামে বার্তার পর হামলাকারী হিসেবে যে পাঁচজনের ছবি আসে ইন্টারনেটে, তার সঙ্গে পুলিশের সরবরাহ করা সব ছবি মিলছিল না।
পুলিশের পাঠানো ছবি গণমাধ্যমে আসার পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা ব্যক্তিকে সাইফুল বলে শনাক্ত করেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় থাকা তার পরিবারের সদস্যরা।
রোববার নড়িয়ার কলুকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেই সাইফুলের বাড়িতে প্রতিবেশীসহ শত শত মানুষের ভিড়। দুই মেয়ে সামিয়া ও ইমলিকে নিয়ে বিলাপ করছেন তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৭)।
সাইফুলের মা সত্তরোর্ধ্ব সমেরা বেগমও কাঁদছিলেন; আর বলছিলেন, ঈদের ছুটিতে ছেলে বাড়ি আসার কথা বলে গিয়েছিল।
সাইফুল ১০ বছর জার্মানিতে থাকার পর দেশে ফিরে দেড় বছর আগে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পিজা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন বলে জানায় তার স্বজনরা।
সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা সোনিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার বিকালে তার সঙ্গে স্বামীর শেষ কথা হয়। এরপর থেকে ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন তারা।
সাইফুলের পরিবারের দাবির বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নড়িয়ার কোনো লোক গুলশান ট্রাজেডিতে মারা গেছে, তা আমি জানি না। কেউ আমাকে জানায়নি।”
পুলিশ দাবি করলেও সাইফুলকে হামলাকারী হিসেবে মেনে না নেওয়ার পক্ষে ফেইসবুকে অনেকে তার পোশাকের দিকটিই যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন।
ফেইসবুকে আসা এক ছবিতে দেখা যায়, এক নারী মোবাইল ফোনে শেফের পোশাক এবং অ্যাপ্রোন পরা এক ব্যক্তির ছবি দেখাচ্ছেন, আর ইনসেটে রয়েছে পুলিশের ‘জঙ্গি’ দাবি করা ওই ব্যক্তির মরদেহের ছবি।
ক্যাফের এক কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বলেন, “ক্যাফের পিজা শেফ হিসেবে কাজ করতেন সাইফুল। প্রকাশিত ছবির সঙ্গে তার চেহারায় মিল রয়েছে।”
সাইফুলের পিজা বেশ জনপ্রিয় ছিল বলে জানান তার এই সহকর্মী।
আইএসের বরাতে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ যে পাঁচ হামলাকারীর নাম দিয়েছে, তাতে সাইফুল নামে কেউ নেই, তার মতো কারও ছবিও নেই।
আবার সাইফুলের ছবি সরবরাহকারী পুলিশ হামলাকারী পাঁচজনের নাম বলেছে- আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। সাইফুলের ছবি থাকলেও নাম নেই।
অভিযানে ছয়জন নিহত হওয়ার খবর দিলেও একজনকে বাদ রেখেই নাম ও ছবি দিয়েছে পুলিশ।