নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে নতুন করে আর কিছু করবে না নির্বাচন কমিশন।
Published : 28 Nov 2018, 03:46 PM
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির অন্যতম দাবি, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া ‘গায়েবি’ মামলাগুলো যেন ভোটগ্রহণ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তবে মামলাগুলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে হওয়ায় কিছু করার নেই নির্বাচন কমিশনের। পুলিশকেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইসি সচিবসহ প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘গোপন বৈঠকের’ যে অভিযোগ বিএনপি করেছে, সে বিষয়েও মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে এই অভিযোগকে আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
‘পক্ষপাতদুষ্ট’ পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাময়িকভাবে ভোটের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা এবং বিতর্কিতদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলির যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখন কিছু করবে না।
অপরদিকে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান বিদেশে থাকায় তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলে তাতে বাধা দিতে পারছে না কমিশন।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকের পর সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে এ তথ্য জানান।
এ পর্যন্ত দলগুলো থেকে আসা সব অভিযোগ ও দাবি বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রত্যেকটি অভিযোগ নির্বাচন কমিশন পাঠ ও যাচাই-বাছাই করেছেন। যেসব মামলা মোকদ্দমার বিষয় রয়েছে তা পুলিশের আইজিপির কাছে প্রেরণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
“আরও অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের করার কিছুই নেই। ইসির করার যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে বুধবার শেষ হচ্ছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়। ২ ডিসেম্বর বাছাই ও ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, মামলার বিষয়ে অভিযোগ দেয় কমিশনে। সেই সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারসহ শ’খানেক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
ইসি সচিবসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়েও নালিশ দেয় কমিশনেই। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ের অভিযোগও জানানো হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
পাল্টা অভিযোগ দেয় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট। বিএনপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগও আনে ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল বলেছে, ইসি, মাঠ প্রশাসনকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি ও ঐক্যফন্ট নানা অভিযোগ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ের অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যাচার।
সেই সঙ্গে মাঠ কর্মকর্তাদের রদবদলের দাবি অযৌক্তিক বলে জানায় তারা।
এখন পর্যন্ত যা করেছে কমিশন
গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোট পেছানোর দাবি জানানোর পর তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়। মনোনয়নপত্র জমার সময়ও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।
এরপরেও বিএনপি ও তাদের সমমনারা ভোট পেছানোর দাবি করলে তাতে আর সাড়া দেয়নি কমিশন।
এরমধ্যে নয়াপল্টনে সংঘর্ষ ও পুলিশের গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে ওই ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
এদিকে বিএনপির অভিযোগের মুখে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে জেলা পর্যায়ে ৪৫ জন মেন্টর নিয়োগে আদেশের পরও কমিশনের হস্তক্ষেপে তা বাতিল করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং নির্বাহী হাকিমদের সঙ্গে আলোচনায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের হয়রানি না করা এবং বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
আর তারেকের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিতে বললেও কমিশনের করার কিছু নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার বিষয়টি বিএনপি ইসিকে দেখার জন্য বললেও কমিশন বলছে, তা আদালতের বিষয়।
আরো খবর