নয়া পল্টনের সংঘর্ষ: পুলিশের তদন্ত চালানোয় ইসির সায়

নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে নয়া পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত শেষ হওয়ার পরই পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2018, 06:34 PM
Updated : 19 Nov 2018, 06:44 PM

পুলিশের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সোমবার সাংবাতিকদের বলেছেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে, তদন্তের পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১৪ নভেম্বর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে বললেও প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি।

ওই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করার প্রেক্ষাপটে নিরীহ কাউকে হয়রানি না করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ইসি সচিব।  

দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের মধ্যে ১৪ নভেম্বর নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি পুলিশের আইজিপির কাছ থেকে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ চেয়ে একটি প্রতিবেদন চেয়েছিল; রোববার তা পাওয়ার পর সোমবার কমিশনের বৈঠকেও তা নিয়ে আলোচনা ওঠে।

বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, আইজিপি অডিও-ভিডিওসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছেন। কমিশন এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে যে, পল্টনের ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “এটি বর্তমানে তদন্তাধীন। নির্বাচন কমিশন মনে করে, আইনগতভাবে এর তদন্ত চলতে কোনো আপত্তি নাই। পুলিশের তদন্তে কোনো বাধা নেই। তদন্তের পরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।”

সচিব জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো নিরাপরাধ বা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমন কোনো ব্যক্তিকে যেন অহেতুক হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না হয় সেজন্য সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নির্বাচনী পরিবেশ যেন কোনোভাবে ক্ষুন্ন না হয়, এ ব্যাপরে সকল রাজনৈতিক দল ও ভোটারের সহযোগিতা কামনা করছি।”

পুলিশের পক্ষ থেকে অডিও-ভিডিও নেওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো তথ্য সরবরাহ করা হলে তা কমিশন আমলে নেবে কি না- এ প্রশ্নে সচিব বলেন, “যেহেতু ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব একমাত্র পুলিশের।”

নয়া পল্টনে সংঘর্ষের দিন সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন হেলালুদ্দীন।

এই ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর আকতারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কফিল উদ্দিনসহ দলটির দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন ‘গায়েবি ও মিথ্যা’ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার না করে, সেজন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিতে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল বিএনপি। দুই সহস্রাধিক মামলার একটি তালিকা দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অনুরোধও জানায় দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “বিএনপির তালিকা আমরা পেয়েছি। সেটি নির্বাচন কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

“ওখানে দেখা যাচ্ছে যে, দীর্ঘ তালিকা মূলত তফসিল ঘোষণার আগেই কিছু কিছু মামলা হয়েছে এবং সেই মামলায় কিছু কিছু নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী সময়ের জন্য নির্বাচন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”

তফসিল ঘোষণার পরবর্তী বিষয়গুলো নিয়ে ‘সিদ্ধান্ত’ হলে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

“তফসিল ঘোষণার পরের বিষয় নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিশন মনে করছে, সেখানে অপরাধের বিবরণ নাই বলে কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।”