শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সড়কে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা উত্তরণের উপায়’ র্শীষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা ও যানবাহনের হালহকিকত নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এক সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলে, সারা দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যানবাহন রাস্তায় চলছে, যার ৭২ শতাংশেরই ‘ফিটনেস নেই’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লংঘন করে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে, ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
“আরা সারা দেশে চালকের সংখ্যা ৭০ লাখ, তাদের মধ্যে বিআরটিএ’র লাইসেন্স আছে ১৬ লাখের। বাকিরা অবৈধভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন।”
সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্য মতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে এক হাজার ৭৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৮৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৪৭৭ জন, যাদের ২৮৮ জনকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।
বিআরটিএ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের জরিমানা আদায় পদ্ধতির সমালোচনা হয় এ সভায়। ট্রাফিক পুলিশ নিজেরাই ‘চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ায়’ পরিবহন খাতের প্রকৃত মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ আনেন বক্তারা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়রম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, “সড়ক পরিবহন সেক্টরে নতুন যে আইন করা হচ্ছে তাতে সবার মতামতের প্রতিফলন হয়নি। ফলে এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা কঠিন।”
প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন পাশ করার আগে সবার মতামত নিয়ে সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আইনের সন্নিবেশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পাশাপাশি এই সেক্টরের সমস্যা সমাধানে যাত্রী সাধারণের মতামত ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেও পরামর্শ দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম সালেহ উদ্দীন আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বুয়েটের অধ্যাপক মাহবুব আলম তালুকদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আলোচনায় অংশ নেন।
সভায় নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরার পর বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “আমরা এসব দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলতে চাই। কেননা আমাদের সড়কে সমস্ত অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে নৈরাজ্যকর পরিবেশে আমাদের যাতায়াতে বাধ্য করা হচ্ছে।”
সভায় সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ১০ টি সুপারিশ তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নগরীতে বাসে-বাসে প্রতিযোগিতা বন্ধে কোম্পানিভিক্তিক একই রংয়ের বাস সার্ভিস চালু, গণপরিবহন সার্ভিস অথরিটির নামে একটি টিম গঠন করা, ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম জবাবদিহির আওতায় আনা, বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত জনবান্ধব করা, ট্রাফিক পুলিশের মামলার জরিমানা সরাসরি ব্যাংকে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।