অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে তদন্ত ‘আটকাতে’ দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে রুল দিয়েছিল হাই কোর্ট, তার উপর শুনানি শেষ হয়েছে।
Published : 31 Oct 2017, 08:15 PM
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার শুনানি শেষ হওয়ার পর এটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়; অর্থাৎ এখন যে কোনোদিন রায় ঘোষণা করা হবে।
মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন তার অভিমত তুলে ধরেন।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী বদিউজ্জামান তরফদার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানে তার বিষয়ে নথিপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দিয়েছিল দুদক।
তার জবাবে এই তদন্ত ‘সমীচীন হবে না’ উল্লেখ করে ২৮ মার্চ দুদককে পাল্টা চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরে এ চিঠি দেওয়া হয়।
দুদককে দেওয়া চিঠিটি অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান হাই কোর্টের নজরে আনলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। তাতে ওই চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
ওই রুলের উপর গত ১৯ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়ে শেষ হল মঙ্গলবার।
শুনানিতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, এ চিঠি সুপ্রিম কোর্ট বা প্রধান বিচারপতির আদেশ নয়। দুদককে দেওয়া চিঠিতে ‘সুপ্রিম কোর্ট মনে করে’-এ কথাগুলোও লেখা ঠিক হয়নি। কারণ এটা সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের (আপিল বিভাগ বা হাই কোর্ট বিভাগ) আদেশ নয়।
“প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে এ চিঠি দেওয়া হলো, এমন কথা তো বলা হয়নি,” বলেন তিনি।
ছুটিতে যাওয়া প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দায়িত্ব পালনের সময় এই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার মধ্যেই তারই সাবেক সহকর্মীকে নিয়ে রুলের শুনানি শুরু হয় হাই কোর্টে।
শুনানিতে আদালত আইনজীবী সমিতির সভাপতির কাছে জানতে চায়, সুপ্রিম কোর্টের সব প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে। তাই যে কোনো প্রশাসনিক আদেশ তো তার নির্দেশেই হওয়ার কথা।
জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, “এখানে প্রধান বিচারপতির কথা তো বলা হয়নি।
“আর এ চিঠি লেখার পরও দুদক চুপ করে বসে থাকেনি। তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। পরে সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। তাই এ চিঠির আর কার্যকারিতা নেই।”
তখন আদালত বলেন, এটা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হয়েছে। তাই হয়ত তাদের বোধদয় হয়েছে। এরপর সব তথ্য দিয়েছে।
এ চিঠি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাবেক সহকর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে চেয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা।
এর মধ্যে গত ৩১ জুলাই বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে মোট ২৩ নথি দুদকের কাছে সরবরাহ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। দুদকও অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, “যেহেতু চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের কথা বলা হয়েছে তাই সুপ্রিম কোর্টের কাছেই জানতে চাওয়া উচিৎ ছিল, তারা এ জাতীয় কোনো চিঠি দিয়েছে কি না? কিন্তু তা না করে হাই কোর্টে আসা ঠিক হয়নি।”
এসময় আদালত বলে, সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনলেই তো সকলেই ভয় পায়। তাই হয়ত…
জয়নুল আবেদীন বলেন, “আদালতের কথা শুনে ভয় পেলে চলবে না। আদালতকে ভয় পান এমন ব্যক্তির দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা উচিৎ নয়। তাকে সকল ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকার বা অন্য কাউকে ভয় পেলে চলবে না।”
আদালত বলেন, এখন তো শুনছি, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও দুর্নীতি হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান একটি লিখিত বক্তব্য দাখিল করে বলেন, “আদালত আগের শুনানির দিন জানতে চেয়েছিল, দুদক এতদিন কী করেছে? তার জবাব এতে রয়েছে।
“দুদক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে ২০১০ সালের পর গত সাত বছরে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। দুদক একদিনও ঘুমায়নি।”
এরপর আদালত শুনানি শেষ করে রুলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার আদেশ দেয়।