বর্জনের সংস্কৃতি পাল্টে সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে আসবে এমন আশা করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘সজাগ’ থাকার তাগিদ দিয়েছেন।
Published : 24 Oct 2017, 05:05 PM
বিশেষ করে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, “এবার না এলে মুশকিল রয়েছে। কেউ যেন নির্বাচন না করার মনোবৃত্তি না রাখেন।”
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সংলাপ শেষে একথা বলেন সাবেক এ সিইসি।
সংলাপে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিবসহ ১৬ জন বিশেষজ্ঞ বৈঠকে অংশ নেন।সিইসি কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্টরাও উপস্থিত ছিলেন।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় মতবিনিময়ের পরে এটিএম শামসুল হুদা জানান, বিদ্যমান আইন অভিজ্ঞতার আলোকে সংস্কারের দরকার। এজন্য ইসির এখতিয়ার ও এখতিয়ারের বাইরের বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে।
“আমারও ডায়ালগ করেছি, বর্তমান ইসিও করছে। এমন কিছু বিষয় রয়েছে আমাদের ইসির করার কিছুই নেই।”
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, নির্বাচনকালীন সরকার, সীমানা পুনর্বিন্যাসে বৈষম্য দূর করা (আসন বাড়ানো, মফস্বলে কমানো) প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সাবেক এ সিইসি।
শুধু সামনের নির্বাচন নয়, আগামীতে শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থার কথাই তুলে ধরেন সাবেক সিইসি। নির্বাচন এলেই খণ্ড খণ্ড বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার তাগিদ দেন শামসুল হুদা।
অবকাঠামোগত ও মানব সম্পদ উন্নয়নে নিজের আমলে নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি জানান, আগামীতে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে বাছাই করে কিছু লোককে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যেতে পারে।এ জন্যে আরও প্রশিক্ষণের দরকার।
‘বয়কট আর নয়, দলের দায়িত্ব অনেক’
শামসুল হুদা জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করা ইসি একার পক্ষে সম্ভব নয়।
“পলিটিক্যাল পার্টিগুলোরও সুষ্ঠু করার জন্যে দায়িত্ব আছে। গত নির্বাচনে যেমন কালচার অব বয়কট হয়েছে; সুতরাং এবার পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে সজাগ থাকতে হবে, সবাই যেন নির্বাচন করেন।সে মনোবৃত্তি যেন হয়।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এখন ‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি করছে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ তাদের।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
বিএনপি এবারও যদি ভোট বর্জন করে এবং তাদের ভোটে আনার বিষয়ে উদ্যোগ কী হবে জানতে চাইলে শামসুল হুদা বলেন, “এবার যদি করে এ ইলেকশন, মুশকিল আছে, এবার সব পার্টিকে (অংশগ্রহণ) করতে হবে।”
এক প্রশ্নে সাবেক এই সিইসি বলেন, “একাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা যদি বলেন, তত্ত্বাধায়ক সরকার আর হবে না, এটা সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এর পিঠাপিঠি ওই টাইম ফ্রেমে থেকে যদি আরেকটি নির্বাচন করতে হয় তাহলে ওইটা (তত্ত্বাবধায়ক) আর পারবেন না।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতেই ভোট করার কথা জানান শামসুল হুদা।
তিনি বলেন, “যে পরিস্থিতি এবং পরিবেশ, যে অবস্থা রয়েছে তা মেনে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। এখানে কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনাই হয়নি। এখানে আজ যারা ছিলেন তারা সবাই বুঝতে পেরেছে এটা নিয়ে এখানে আলাপ করে লাভ নেই, এটা ইসির কাজ না।”
এসব রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেনার বিচারিক ক্ষমতার বিপক্ষে
সাবেক সিইসি শামসুল হুদা বলেন, “সেনা মোতায়েন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উইথ ইন দ্য এক্সিসটিং লিগ্যাল ফ্রেইম ওয়ার্ক তাদের নিয়োগ করতে হবে। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা রয়েছে, এ অবস্থায় আর্মিকে এ ক্ষমতা দিবেন কিনা এ প্রশ্ন রয়ে যায়।
“যদি আর্মি কোথাও ডেপ্লয় করা হয়, আর্মির অফিসার যদি দেখেন এখানে অনিয়ম হচ্ছে, তখন তো ব্যবস্থা নিতে পারেন।”
কিছুটা আস্থা অর্জন হয়েছে
নির্বাচন কমিশনের আস্থা অর্জনের বিষয়েও গুরুত্ব দেন এটিএম শামসুল হুদা।
বর্তমান ইসির চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, “কথা ও কাজে-কর্মে ফেয়ারনেস দেখাতে হবে, যাতে আস্থা নষ্ট না হয়। কিছুটা আস্থা তো হয়েছে, এটা ধারণ করতে হবে।”
সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবন নয়: রউফ
আরেক সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে ফেয়ার ইলেকশন করা সম্ভব না। তারা পলিটিক্যালি চার্জে রয়েছে, এটাই বিদ্যমান পরিস্থিতি।
“দেশের সমস্যা একটাই- ইনডিসিপ্লিন। এটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে না আনা হলে নিউক্লিয়ার উইপন নিয়েও নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না।”
এর আগে ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধি, ২৪ অগাস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর ৪০টি নিবন্ধিত দল, ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে নিরবাচন কমিশন।