১০ বছর পর ইসির সংলাপে আজিজ কমিশন

বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশনকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 02:00 PM
Updated : 12 Oct 2017, 02:00 PM

১০ বছর আগে নবম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি ভোটের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিল আজিজ কমিশন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিলে সঙ্কট নতুন মাত্রা পায়। 

১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমদ। পরে ওই ভোটের তফসিল বাতিল করা হয়।

২১ জানুয়ারি সিইসি এম এ আজিজ এবং ৩১ জানুয়ারি বাকি পাঁচ কমিশনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে  আজিজ অধ্যায়ের ইতি ঘটে।

বেশ বিতর্কের মধ্যে থাকায় পরবর্তী সময়ে আজিজ কমিশনের কোনো সদস্যই কখনও গণমাধ্যম ও সভা-সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেননি।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন ইসি গঠনের প্রাক্কালে এ কমিশনের সদস্য স ম জাকারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমি আর ইসি নিয়ে কোনো কথা বলব না।”

সাবেক এ নির্বাচন কমিশনারকে ইতোমধ্যে কমিশন থেকে যোগাযোগ করেছেন কি না বা আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন কি না-  জানতে বৃহস্পতিবার বিকালে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। সংলাপে  যাবেন কিনা, তাও বলেননি। কুশল বিনিময় করে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ  থেকে কল কেটে দেন তিনি।

সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ইসি সচিবালয়ে কাজ করা স ম জাকারিয়া নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন

২৪ অক্টোবর নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন এমন সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বিচারপতি এমএ আজিজ কমিশনসহ ১৭ জন সদস্য তালিকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজ ছুটিতে যাওয়ার ওই ইসিতে নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সিইসি ছিলেন, তিনি এখন প্রয়াত। ওই কমিশনে অন্য চারজন নির্বাচন কমিশনার ছিলেন স ম জাকারিয়া, মাহমুদ হাসান মনসুর, মুদাব্বির হোসেন চৌধুরী ও মো. সাইফুল আলম।

ইসি ২০০৬: বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে- সিইসি এমএ আজিজ, ইসি উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ (কালো স্যু ট), ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া (গোলাপী টাই), তার পেছনে আইন শাখার উপ সচিব একেএম সলিমউল্লাহ, উপসচিব জেসমিন টুলী, নির্বাচন কমিশনার স ম জাকারিয়া, বিচারপতি মাহফুজুর রহমান, একে মোহাম্মদ আলী ও মুনসেফ আলী

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের ইসি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন।

এর আগে ১১ জন সিইসি ও ২৩ জন নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এম এ আজিজ কমিশনের সদস্যরা কখনও কোনো আলোচনায় অংশ নেন না, ২০০৭-২০১২ মেয়াদের এ টি এম শামসুল হুদা ও ২০১২-১৭ কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনও তাদের সংলাপে ডাকেনি।

তবে বর্তমান কমিশন সবার সঙ্গে আলোচনার কথা বলে ‘সমালোচনা এড়াতেই’ ২০০৫-২০০৭ সালের আজিজ কমিশনের সদস্যদের আমন্ত্রণ পাঠাচ্ছে।

আমন্ত্রিত ৫ সিইসি ও ১২ নির্বাচন কমিশনার

সাবেক সিইসিদের মধ্যে বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, মোহাম্মদ আবু হেনা, বিচারপতি এম এ আজিজ, এ টি এম শামসুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে  ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠি  ও প্রস্তাবিত রোডম্যাপসহ সংলাপের আমন্ত্রণপত্র বর্তমান ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানায় ইসির জনসংযোগ শাখা।

১৯৯১ সালের নির্বাচনকালে সিইসির দায়িত্ব পালনকারী বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, “আমাকে আমন্ত্রণ দিলে অবশ্যই যাব। সিনিয়র হিসেবে আমার কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব। পরামর্শ দেব।”

সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ (ফাইল ছবি)

নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এমএম মুনসেফ আলী, এ কে মোহাম্মদ আলী, স ম জাকারিয়া, মো. সাইফুল আলম, মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী,  মাহমুদ হাসান মনসুর, মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজকে।

সাবেক এই ১২ নির্বাচন কমিশনারের আবাসিক ঠিকানায় আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

২২ নারী নেত্রী, ৩৩ পর্যবেক্ষক সংস্থা

ইসি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, নিবন্ধিত ৪০টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। এরমধ্য দিয়ে ৩১ জুলাই থেকে অক্টোবরব্যাপী সংলাপ শেষ করবে ইসি।

তিনি জানান, পর্যবেক্ষক সংস্থার ৩৩ জন প্রতিনিধি এবং নারী নেত্রী ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ২২ জনকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

নারী নেত্রীরা হলেন হামিদা হোসেন, আয়েশা খানম, সেলিনা হোসেন, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অ্যারোমা দত্ত, রোকেয়া কবির, সেলিনা আহমেদ, সালমা আলী, মনিরা রহমান, অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ওয়াহিদা বানু, সালমা খান, ফরিদা ইয়াসমিন, রেহানা সামদানী, রোকেয়া রফিক, পারভীন সুলতানা ঝুমা, মাহবুবা বেগম, রেহানা সিদ্দিকী, মাসহুদা খাতুন শেফালী, শাহীন আক্তার ডলি, শার্মিনা জামান ও মনসুরা আক্তার।

পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধানরা হলেন মো. সামসুল হক, প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, শাহজাহান গাজী, মো. হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী, শারমিন মুর্শিদ, আনোয়ার হোসেন, এএনএম ইমাম হাসনাত, সাইফুল ইসলাম দিলদার, কামরুল হাসান মঞ্জু, শেখ আবদুল মালেক, তালেয়া রহমান, মুনিরা খানম, মিজানুর রহমান, এএইচএম নোমান, নোমান আহমেদ খান, রেজাউল করিম চৌধুরী,  রোখসানা খন্দকার, মো. আব্দুল আলীম, শফিকুল ইসলাম, সাকিব আহমেদ বশার, স্বপন গুহ, বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, এসএম হারুন অর রশীদ লাল, শহীদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন খান,  একে আরজু, শামিমা ইয়াসমিন, হারুন অর রশীদ, সেলিমা সারওয়ার, সরদার হুমায়ুন কবির, এনজেলা গোমেজ, খন্দকার আলমগীর হোসাইন।