স্মার্ট কার্ড: এক বছরে বিতরণ মাত্র ১৫%

স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরুর পর এক বছরে নয় কোটি ভোটারের মধ্যে ১৫ শতাংশ কার্ড বিতরণ করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন, যদিও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সবার হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2017, 06:02 AM
Updated : 5 Oct 2017, 06:17 AM

এই এক বছরে বিতরণ কাজ চলেছে মূলত ঢাকা মহানগরীতে। এখনও মিরপুর ও উত্তরা এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকার অর্ধ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ তাদের কার্ড সংগ্রহ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণের এই হার খুবই ‘হতাশাজনক’। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিতরণ কাজ শুরু হলেও অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়েছে শম্বুকগতিতে। এরই মধ্যে কার্ড তৈরি ও বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। দশ আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার যন্ত্র কেনা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন ঝামেলা। ফলে কাজ চলছে শ্লথ গতিতে।

সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাঝখানে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির ব্যর্থতার কারণে বিতরণ কাজ পিছিয়ে গেছে। এখন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশন (কার্ডে ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য সন্নিবেশ করার কাজ) করা হচ্ছে।

“কাজের গতি বাড়িয়ে মাসে ৫০ লাখ পর্যন্ত কার্ড ছাপানো হচ্ছে। কিন্তু পিপিআর-এর নিয়ম মেনে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ নেওয়ার যন্ত্র কিনতে গিয়ে বিলম্ব হচ্ছে।”

তিনি জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ‘বিতরণ স্লো’ হলেও দুয়েক মাসের মধ্যে ডিভাইস কেনা গেলে গতি বাড়বে।

ফাইল ছবি

“প্রথম বছর একটু ধীরে কাজ হয়েছে। আশা করি আগামী বছর দেশজুড়ে পুরোদমে বিতরণ কাজ হবে। সেক্ষেত্রে নভেম্বর-ডিসেম্বরে জেলা পর্যায়ে বিতরণে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আগামী ১৫ মাসের মধ্যে সবার হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দিতে পারব। আমরাই পারি, আমরাই পারব- তার প্রমাণ দেখিয়ে দেব,” বলেন এনআইডি উইংয়ের ডিজি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর স্মার্ট কার্ড বিতরণ উদ্বোধন করেন। পরে রাষ্ট্রপতির কাছেও স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়। ৩ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীতে শুরু হয় বিতরণ।

এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনগুলো ও বিলুপ্ত একটি ছিটমহলে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ চলেছে।

কতটা এগিয়েছে কাজ?

>> বর্তমানে দেশে ভোটার ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি। এর সঙ্গে জানুয়ারিতে যোগ হচ্ছে আরও ২৫ লাখ নতুন ভোটার।

>> লক্ষ্য ছিল এর মধ্যে নয় কোটি ভোটারের হাতে ডিসেম্বরের মধ্যে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়া

>> সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার স্মার্ট কার্ড উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশন হয়েছে।

>> এর মধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

>> এখনও উৎপাদন ও বিতরণ বাকি ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার (৭৭ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন) স্মার্ট কার্ড

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরী থেকে বিতরণ শুরু করে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা সিটিতে বিতরণ চলছে। ৭ অক্টোবর রংপুর সিটিতে ও মধ্য অক্টোবরে সিলেট সিটিতে বিতরণ শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরেও ‘শিগগিরই’ শুরু হবে। নভেম্বরের শেষ ভাগে ৬৪ জেলায় বিতরণে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

“ঠিকমত শুরু করতে পারলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ কাজ শেষ করতে পারব।”

ঢাকা মহানগরে প্রায় ৬০% কার্ড বিতরণ

ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,  ঢাকা মহানগরের অর্ধ কোটি ভোটারের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫২ জন স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছেন।, যা ৬০ শতাংশের মত। ২০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৭ জন ভোটার এখনও কার্ড নেননি।

“মিরপুর ও উত্তরার কয়েকটি ওয়ার্ডে এখনও বিতরণ চলছে। ঠিকানা পরিবর্তন, কর্মস্থল পরিবর্তনসহ নানা কারণে নাগরিকরা কার্ড নেননি অনেকে। তাদেরকে পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।”

যারা হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং এখনও কোনো ধরনের কার্ড পাননি- তাদের বিষয়েও দ্রুত কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান এ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের আওতায় নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দিতে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের অবার্থর টেকনলজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল নির্বাচন কমিশন, যা গেল মাসে বাতিল করা হয়। কয়েক দফা বাড়ানোর পর এ বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

এ অবস্থায় বিদ্যমান আইডিইএ প্রকল্পটিতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক আর আগ্রহী না হওয়ায় সরকারি অর্থায়নে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্মার্ট কার্ড উৎপাদন ও বিতরণে সেনাবাহিনীকেও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আইডিইএ প্রকল্প শেষে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক নতুন একটি প্রকল্প নিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।