হারানো এনআইডি জেলায় ছাপানোর প্রস্তাব

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নাগরিকদের ঢাকায় আসার ভোগান্তি এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের উপর থেকে চাপ কমাতে হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নতুন করে জেলা পর্যায়ে ছাপানোর প্রস্তাব এসেছে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2017, 07:37 PM
Updated : 30 Sept 2017, 07:44 PM

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ছাপানোর ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনের কাছে তোলা হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান জানিয়েছেন।

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন ও তথ্য সংশোধনের আবেদনের সুযোগ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে থাকলেও এনআইডি কার্ড নিতে নাগরিকদের রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে যেতে হয়। কারণ এখন কার্ড ছাপানোর ক্ষমতা ও ব্যবস্থা শুধু কেন্দ্রেই রয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংশোধিত বা হারানো এনআইডি কার্ড তোলার আবেদন কেন্দ্রে আসার পর যাচাই-বাছাই বা তদন্তের জন্য সেটা জেলা-উপজেলায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে আবেদনসহ তদন্ত প্রতিবেদন আবার কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

“আবেদন সঠিক বিবেচিত হলে কার্ড ছাপানো হয় ঢাকায়। এরপর তা স্থানীয়ভাবে বিতরণের জন্য পাঠানো হয়। এ বড় কর্মযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে একটা দায়িত্ব জেলা পর্যায়ে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।”

নির্বাচন ভবন

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যাচাই-বাছাই ও তদন্ত শেষে এনআইডি কার্ড স্থানীয়ভাবে ছাপানো সম্ভব হলে জেলা থেকে উপজেলায় বিতরণ করা যাবে। তাতে নাগরিকদের ব্যয় ও আসা-যাওয়ার ভোগান্তি কমবে।

তবে পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজটি সময়সাপেক্ষ ও স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রাথমিকভাবে শুধু হারানো কার্ড জেলা পর্যায়ে ছাপানোর ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা জানান।

মোখলেসুর বলেন, কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে তাতে যাচাইয়ের দরকার পড়ে না। থানায় সাধারণ ডায়রির (জিডি) অনুলিপির সঙ্গে নির্ধারিত ফি জমা দিলেই কেন্দ্রীয় অফিস থেকে কার্ড ছাপিয়ে দেওয়া হয়।

“কিন্তু হারানো কার্ডের ডুপ্লিকেট সংগ্রহের জন্য উপজেলা থেকে ঢাকায় আসা কষ্টসাধ্য। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুধু হারানো কার্ড ছাপানোর ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া গেলে ভালো হবে।”

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এ বিষয়ে প্রস্তাব কমিশনের কাছে উপস্থাপনের কথা জানালেও কবে নাগাদ সেবা দেওয়া শুরু করা যাবে তা বলতে পারছেন না অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।

“এটা খুবই প্রাথমিক আলোচনার মধ্যে রয়েছে। কারণ, এটি করতে হলে প্রত্যেক জেলার জন্য মেশিন লাগবে; তারপর কেউ তার এনআইডি প্রিন্ট করতে বললে সেটি খুঁজে পেতে হলে, সেন্ট্রাল ডেটাবেজের সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচন অফিসের সার্ভার স্টেশনের ডেটা কানেকটিভিটি লাগবে। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।”

দেশের ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে, যাদের অধিকাংশকেই লেমিনেটেড এনআইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে ২০১৪ সালের পরে নিবন্ধিত কোটি নাগরিকের হাতে কোনো ধরনের কার্ড এখনো পৌঁছেনি।

এনআইডির সব ধরনের সেবা কার্যক্রম কেন্দ্রীভূত থাকায় নির্বাচন কমিশন ও এনআইডি প্রকল্পের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা অর্থ আদায়সহ নাগরিকদের হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে আগারগাঁওয়ের পাশাপাশি দেশের পাঁচ শতাধিক উপজেলা নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দিতে আবেদনপত্র নেওয়া হয়।

কার্ড সংশোধন, ডুপ্লিকেট এনআইডি কার্ড সংগ্রহসহ নানা ধরনের সেবা নিতে প্রতিদিন হাজারো নাগরিক ভিড় করছে ইসি ভবনে।

নতুন ভোটার হতে কোনো ধরনের ফি না লাগলেও অন্য সেবা নিতে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। সেক্ষেত্রে জরুরি ও সাধারণ সেবায় ৭ দিন থেকে একমাস সময় লাগে।