রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় জ্বালানির বর্জ্য রাশিয়াকে ফেরত দিতে এ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
Published : 05 Jun 2017, 10:35 PM
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ ও রাশান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য ‘কো-অপারেশন কনসার্নিং রিটার্ন অফ স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল ফ্রম রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট টু দ্য রাশান ফেডারেশন’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরে দেশটির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে রূপপুরের নিউক্লিয়ারের বর্জ্য কীভাবে ডিসপোজাল করা হবে তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। কারণ এটা অনেক বড় সমস্যা, এটা হ্যান্ডেল করার মত সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।”
ওই বৈঠকে বর্জ্য ডিসপোজালের দায়িত্ব রাশিয়া নিতে সম্মত হয়েছিল জানিয়ে শফিউল বলেন, “এজন্য এগ্রিমেন্ট আনা হয়েছে। ইন্টারগর্ভমেন্টাল এগ্রিমেন্ট আকারে প্রাথমিকভাবে খসড়া অনুস্বাক্ষরিত হয়, এখন মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
“এটা বড় সমস্যা। রূপপুরে যে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহার করা হবে, সেই জ্বালানি যখন বর্জ্য হয়ে যাবে- সেটাকে সায়েন্টিফিক্যালি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন একটা সমস্যা। এটাকে সহজ করা হয়েছে, রাশিয়ানরা নিজেরাই নিয়ে যাবে এবং ডিসপোজাল করবে।”
নিরাপত্তার বিষয়গুলো পুরোপুরি অনুসরণ করেই বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য নেবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খসড়া চুক্তিতে বাংলাদেশ ও রাশিয়া অনুমোদন দিয়েছে বলে গত ১৮ মার্চ জানায় রুশ দূতাবাস।
পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর চুক্তি হয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের।
সে অনুযায়ী, ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে; যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।
৫০ বছর আয়ুর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ার ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত চুক্তিতে এবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ না থাকায় উদ্বেগ তৈরি হয়।
কর্মকর্তারা এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ের পর উচ্চ তেজস্ক্রিয় এসব বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণের জন্য রাশিয়া ফেরত নিয়ে যাবে।
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রস্তাবিত ‘কনভেনশন অন দি ফিজিক্যাল প্রোটেকশন অফ নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল অ্যান্ড নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিস’ এর খসড়া এবং এর অনুসমর্থন প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটা একটা মূল চুক্তি, এই কনভেনশনটি ১৯৭৯ সালে সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক গৃহীত হয়। বাংলাদেশও মূল কনভেনশনের সিগনেটরি।
“নিউক্লিয় পদার্থের অব্যাহতি ও আন্তর্জাতিক ব্যবহার পরিবহনে ভৌত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইএইএ নতুন একটা সংশোধনী এনেছে। সেই সংশোধনীতে এ পর্যন্ত ১০৭টি দেশ অনুসমর্থন করেছে। আমরা যেহেতু মূল কনভেনশনে সই করেছি সেহেতু সংশোধনেও আমাদের অনুসমর্থন দেওয়া দরকার। মন্ত্রিসভা এটাকে অনুমতি দিয়েছে।”
শফিউল বলেন, “আগে শুধু নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল ছিল। এখন ম্যাটিরিয়ালের সঙ্গে নিউক্লিয়ার ফ্যাসেলিটিসগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিউক্লিয় পদর্থের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার, গুদামজাতকরণ, পরিবহন এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।”