জাতীয় পরিচয়পত্র হিসাবে স্মার্টকার্ড বিতরণের শুরুতেই কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও ‘যান্ত্রিক জটিলতায়’ ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা।
Published : 03 Oct 2016, 05:59 PM
সঠিক নির্দেশনা না পেয়ে নির্ধারিত এলাকার বাইরের লোকেরা যেমন বিতরণকেন্দ্রে ভিড় করেছেন, তেমনি আঙুলের ছাপ নিয়ে সফটওয়ারের জটিলতায় অনেককে ফিরে যেতে হয়ে স্মার্টকার্ড না নিয়েই।
ঢাকার উত্তরা ও রমনার ছয় ভোটার এলাকায় সাড়ে আট হাজার ভোটার। এর মধ্যে সোমবার দুই হাজার কার্ড বিতরণ করা হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট এলাকার মোট ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশ।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন বিশিষ্টজনের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার পর সোমবার থেকে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উন্নতমানের এ জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
সকাল ৯টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উত্তরায় এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রমনা এলাকায় দুটি স্কুলে শুরু হয় স্মার্টকার্ড বিতরণ। উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র ঘুরে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায় ভোটারদের কাছ থেকে।
সিদ্ধেশ্বরীতে কার্ড সংগ্রহ করতে আসা হামিদা গণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক কষ্টে প্রায় এক ঘণ্টা পর কার্ড হাতে পেলাম। কাজে অনেক মিস ম্যানেজম্যান্ট, সমন্বয়ের অভাব।”
“সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে কিছু ক্ষেত্রে স্মার্টকার্ড বাছাই করে তাদের হাতে তুলেও দেওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিয়ে রাখা হয়েছে। পরে এসে তারা কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে ‘আরও সুচারুভাবে’ কাজ করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন মিহির।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বয়স্ক নাগরিকদের অনেকের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে সমস্যা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ না নিয়েই কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে।
সকালের দিকে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও দুপুরের পর থেকে লোকজনের উপস্থিতি কমতে থাকে। বেলা ২টার পরে উত্তরা হাই স্কুল কেন্দ্রে স্মার্টকার্ড নিতে আসেন সামরিক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম।
দশ আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার পর তার স্মার্টকার্ডটি কোথায় রয়েছে খুঁজে পেলেন না দায়িত্বরত অপারেটর।
এ বিষয়ে অপারেটর কামরুল হাসান বলেন, “আমরা উনার ঠিকানা ও যোগাযোগের ফোন নম্বর রেখেছি। কার্ড কোন বক্সে সাজানো রয়েছে তা কারিগরি ত্রুটির কারণে সনাক্ত করতে পারিনি। আমাদের টেবিলে এ রকম ১১টি ঘটনা ঘটেছে।”
“সবার স্মার্টকার্ড বিতরণ কেন্দ্রে এসেছে কিনা তা যাছাই বাছাই করা হচ্ছে। কারিগরি ত্রুটি ও লোকবল সঙ্কটের কারণে এমনটি হচ্ছে কিনা- তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে।”
বিকালে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের নাসরীন হক কার্ড নিতে এসে জানতে পারেন, ওই কেন্দ্রে কেবল ১ ও ২ নম্বর সেক্টরের কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে।
“কখন কোথায় কার কার্ড বিতরণ হবে তার প্রচার ভালোভাবে হয়নি। আমি কার্ড কবে পাব তাও জানতে পারিনি,” ক্ষোভের সঙ্গে বলেন নাসরীন।
সকাল ১১টায় কেন্দ্রে এসে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর কার্ড পান উত্তরার বাসিন্দা জাকিরুল ইসলাম। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় ২০ মিনিট লাগে তার।
উত্তরার থানা নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. শাহ জালাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিতরণ কাজের শুরুতেই ব্যাপক জনসমাগম ও কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে। আগামীকাল থেকে সব কিছু ঠিকঠাকভাবে চলবে বলে আশা করা যায়।”
সকালে কেন্দ্রে এসে আঙ্গুলের ছাপ দিয়েও স্মার্ট কার্ড পাননি ডা. সালাউদ্দিন আহমদ ও নুজহাত সুলতানা। পরে বিকালে তারা কার্ড হাতে পান।
সামনের দিনগুলোতে প্রত্যেককে ৭/৮ মিনিটের মধ্যে কার্ড দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশ্বাস দেন ইসি কর্মকর্তা শাহ জালাল।
জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, বিকালে তিনি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে কার্ড সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
মো. হালিম খান তুহিন নামে আরেকজন বলেন, “স্মার্ট কার্ড পেয়েছি, কিন্তু বাবার নাম ভুল। বিষয়টি কাকে জানাব বুঝতে পারছি না।”
অবশ্য মীরা রানী ঘোষ ‘খুব সুন্দরভাবে’ কার্ড পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
সিদ্ধেশ্বরীতে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি বিভাগের কর্মী খান মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, আঙ্গুলে কাটা দাগ থাকলে, ভারী কাজ করতে করতে আঙ্গুলের রেখা মুছে গেলে এবং ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনেকের হচ্ছে, তবে সবার হচ্ছে না।
ইসির উপ সচিব ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, “প্রথম দিনে আমরা আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি; কিছু সমস্যাও ছিল। আশা করি, আগামীতে সমস্যাগুলো আর থাকবে না। সুন্দরভাবে বিতরণ হবে।”