সাপ থেকে রক্ষায় পায়ে বুট পরে ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
Published : 17 May 2024, 09:07 PM
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বাসিন্দারা রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্কে দিন পার করছেন।
কয়েক দিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশে কয়েকটি রাসেলস ভাইপারের (চন্দ্রবোড়া) দেখা মিলেছে। হঠাৎ বিষাক্ত এ সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না; আতঙ্কে কেউ ক্ষেতেই যেতে চাইছেন না বলে জানান কৃষক।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বোরচরে কৃষক সুমন বেপারী জমিতে ধান কাটতে গিয়ে রাসেলস ভাইপারের দেখা পান। পরে সেটি মেরে ফেলে হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় গফুর বাদশার আলু ক্ষেতে দুটি রাসেলস ভাইপারের দেখা মেলে।
সুমন বেপারী জানান, ক্ষেতে ধান কাটতে গিয়ে দেখেন ধানের মুঠির নিচে একটি সাপ শুয়ে আছে। সবাই মিলে লাঠিসোঁটা দিয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। সাপের ভয়ে কোনো শ্রমিক জমিতে ধান কাটতে যেতে চাচ্ছেন না।
রাসেলস ভাইপার
রাসেলস ভাইপার সাপটি বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) একে ‘কম বিপদগ্রস্ত’ প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ভেনম রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ এর কো-ইনভেস্টিগেটর ও সুপার ভাইজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পিলু বলেন, সাপটি আগেও ছিল। এখন এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
“আগে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা হত। ক্ষেত ফাঁকা পড়ে থাকত। গত ১০-১২ বছরে দুই-তিনটি ফসল হচ্ছে। সেই সুযোগে ক্ষেতে ইঁদুর আসছে। তাদের খাদ্যাভাস বেড়েছে। বাসস্থান মিলছে। সবমিলিয়ে বংশবিস্তার ভালো হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার।”
অনেকে সাপটিকে অজগরের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন জানিয়ে অধ্যাপক ওয়াহেদ বলেন, এর কারণ হচ্ছে, দুটি সাপেরই গায়ে ডোরাকাটা দাগ আছে। অনেকে অজগর ভেবে ধরতে গিয়ে ভুল করেন। কামড় খাওয়ার কিডনি বিকল হওয়া, চোখে কম দেখাসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফিরোজ জামান বলেন, রাসেলস ভাইপার ভালো সাঁতরাতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ৫-৬ বছরে এ সাপের সংখ্যা বেড়েছে, কারণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা রাসেলস ভাইপারের বংশ বৃদ্ধির অনুকূলে।
“এ সাপের মেইন ডিস্ট্রিবিউশনটা রাজশাহীর পদ্মা এলাকায়। ভারত থেকে বন্যার সময় ভেসে আসে সেখানে। প্রজননের সময় বাচ্চাগুলো ভেসে আসে। এভাবে চাঁদপুর পর্যন্ত ছড়িয়েছে।”
তিনি জানান, রাসেলস ভাইপার বংশবিস্তার করে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। প্রজনন হার তুলনামূলক বেশি।
“বাচ্চাগুলো যখন একটু বড় হয় তখন বন্যা শুরু হয়ে যায়। তখন ভেসে ভেসে যারা পারে ডাঙ্গায় ওঠে, আর যারা পারে না তারা দক্ষিণ-পূর্বে চলে আসে,” বলেন অধ্যাপক ফিরোজ।
বোরচর এলাকার সানাউল্লাহ মাস্টার জানান, কয়েক মাস ধরে এ এলাকায় রাসেলস ভাইপারের দেখা মিলছে। সে কারণে জমিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
উপজেলার এখলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম মুন্না ঢালী বলেন, কৃষকদের সাবধানে কাজ করতে বলা হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে এই অঞ্চলে এই ধরনের সাপ নজরে পড়ছে।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক হাসিবুল ইসলাম জানান, রাসেলস ভাইপার অত্যন্ত বিষধর। এর কামড়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদিও এর প্রতিষেধক রয়েছে। সময়মত চিকিৎসা নিলে বাঁচা সম্ভব।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়েছে। এখলাসপুর ইউনিয়নের বোরচরে এর উপদ্রব বেশি। কৃষকরা পায়ে বুট পরে ধান কাটবেন। তবে সব শ্রমিককে বুট দেওয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়।”
তবে কৃষি বিভাগকে জানালে মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কেটে দেওয়া হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন