ডিমের দামে অবাক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদারই।
Published : 17 May 2024, 09:12 PM
ডিমের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তবে খামার পর্যায়ে দাম যতটা বেড়েছে, বাজারে বেড়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি।
টাঙ্গাইলের সখিপুরের জাকিয়া পোল্ট্রি ফার্মের কর্ণধার জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, তিনি গত সপ্তাহে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছেন ১০ টাকা ৫ পয়সা হিসাবে। এখন দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা। সেই হিসাবে তিনি দাম বেশি পাচ্ছেন ৬৫ পয়সা।
অথচ খুচরায় ২ টাকা বেড়েছে দাম। আগের সপ্তাহেও সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা হালি বিক্রি হওয়া ডিম এখন খুচরায় দোকানে ৫৫ টাকা হালিতে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
অর্থাৎ খুচরা বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ২ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী ও তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায় ডিমের এই বাড়তি দর।
মহাখালীতে মুদি দোকান মার্জিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ৫৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি করছে বিক্রেতা ময়নুল ইসলাম। আর এক পিস ডিম কিনলে পড়বে ১৪ টাকা পিস।
তিনি বলেন, “এখন ডিমের দাম বেশি। আমাদের একটু বেশিতে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও বেশিতে।”
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে এক ডজন ডিম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় কিনছে ক্রেতারা।
ডিম বিক্রেতা মো. মামুন বলেন, “আমাদের কাছ থেকে এক হালি লাল ডিম ৫০ টাকা করে কিনে এলাকায়, পাড়া-মহল্লায় ৫৫ টাকা হালিতে বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতারা।”
তিনি এক ডজন সাদা ডিম বিক্রি করছেন ১৪০ টাকা ডজনে, হালির হিসাবে বিক্রি করছিলেন ৪৮ টাকায়।
এলাকা ভেদে অবশ্য কোথাও দাম কম দেখা গেছে।
তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া কাচা বাজারে মুদি দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, “আমরা প্যারাগন থেকে ডিম কিনি। তারা এখন আমাদের থেকেও দাম বেশি নিচ্ছে। আমরা খুচরায় বিক্রি করি ১৫৫ টাকা প্রতি ডজন। সেই হিসেবে ৫২ টাকা হালিতে বিক্রি করি।”
খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদারও ডিমের দাম দেখে অবাক। তিনি বলেন, “খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা পর্যন্ত যৌক্তিক। এর বেশি দাম হলে তা উচ্চমূল্য।”
এই বাড়তি দরের জন্য তিনি তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের দায়ী করে বলেন, “তারাই ডিমের দাম একসময় কমায়, আবার বাড়ায়। তারা ডিমের দাম কমিয়ে কোটি কোটি ডিম সংগ্রহ করে কোল্ড স্টোরেজ করে রাখার পর ডিমের দাম নিজেরা বাড়িয়ে দিয়ে সেই ডিম কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করে।”
গত এপ্রিলে তীব্র গরমে যখন খামারে বিপুল সংখ্যক মুরগির মৃত্যু এবং ডিমের উৎপাদন কমার তথ্য আসছিল সে সময়ই অবৈধভাবে ডিম মজুদের কথা জানিয়েছিলেন সুমন।
গত কয়েক দিনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে এর প্রমাণও পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লালমাই বরল-বাগমারা এলাকায় অবস্থিত মেঘনা কোল্ড স্টোরেজে অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা ছিল ২১ লাখ ডিম। এই অভিযোগে হিমাগার মালিকদেরকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমল, আরও বাড়ল গরুর মাংস
ডিমের ঊর্ধ্বমুখী দামের মধ্যে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।
গত কয়েকদিন ধরে সোনালি মুরগির কেজি ৪০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশিতেও বিক্রি হচ্ছিল। সেখান থেকে কিছুটা কমে দাম নেমেছে থেকে ৩৮০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির দাম ২১৫ থেকে ২২০ টাকাতেই আছে।
তেঁজকুনিপাড়া বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, “গরমের (দাবদাহ) সময় ১৯০ টাকায়ও বেচছি। তবে এহন একটু বেশিই দাম। তবুও দুইদিন ধরে কমে ২২০ টাকা হইছে।”
দাম বেড়ে গেছে গরুর মাংসের। আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে দাম ঠেকেছে ৭৮০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, “এ দামে গরিব মানুষ খেতে পারছে না। আমাদেরও বেচাবিক্রি কম।”
কাঁচা মরিচের ছুঁয়েছে দেড়শর ঘর
সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ থেকে বেড়ে হয়েছে মানভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের এই সময়টাতে কাঁচা মরিচের কিছুটা সংকট থাকে। তাই আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হয়।
গ্রীষ্মকালীন মরিচের গাছ এখন শুকিয়ে এসেছে। ফলনও আগের তুলনায় কমে এসেছে।
কারওয়ান বাজারে মরিচ বিক্রেতা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “এবার খরার কারণে গাছ মরে গেছে। বাজারে মরিচের সংকট। তাই দাম বেশি।”
তেঁজকুনিপাড়া বাজারের মরিচ বিক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, “৪ থেকে ৫ দিন ধইরা আমাগো কাছ থেইকা দাম বেশি নেওয়া শুরু করছে পাইকাররা। আমি কিনা আনছি ১৭০ টাকা কেজিতে। তাই ২০০ টাকায় না বেচলে আমার লাভ থাহে না। আর মনে হইতাছে দাম আরও বাড়ব।”
কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী নজরুল ইসলাম তাদের কর্মীদের জন্য বাজার করতে এসেছিলেন। তিনি ১০ কেজি মরিচ কিনতে চাইলেও দাম বেশি হওয়ায় ৫ কেজি কিনলেন।
তিনি বলেন, “তিন-চারটা দিন দেখি, দাম একটু কমে কি না।”
গ্রীষ্মের এই সময়টায় লেবুর দামই ক্রেতাদের যা কিছু স্বস্তি দিচ্ছে। কারওয়ানবাজারে ১০ টাকা হালিতেও মাঝারি আকারের লেবু পাওয়া যাচ্ছে। শশার দাম কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা, আলু ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢেঁড়স ৩০ টাকা কেজি, পটল ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, টমেটো, করলা, বরবটি ও বেগুন ৫০ টাকা কেজি দরে কিনছে ক্রেতারা।
উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা পেঁপে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
আরও পড়ুন: