কেবল সরিষাবাড়ির কয়রা গ্রামের মানুষ নয়, আসাম থেকে ভেসে আসা হাতিটি স্থান করে নিয়েছিল বন বিভাগের উদ্ধারকারী দলের প্রতিটি সদস্যের মনে, যারা একমাসের বেশি সময় ধরে বিশাল ওই প্রাণীর পিছনে ঘুরে বেড়িয়েছেন নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য।
Published : 16 Aug 2016, 05:32 PM
পাঁচ দিন আগে ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে বেহুঁশ করে হাতিটিকে ধরার পর উদ্ধারকর্মীরা এর নাম দেন বঙ্গবাহাদুর। তার আগেই কয়েকবার হাতির তাড়া খেতে হয় তাদের। তারপরও কতোটা মায়ায় তারা পড়েছেন, তা বুঝতে পারছেন বঙ্গবাহাদুরের মৃত্যুর পর।
মঙ্গলবার সকালে হাতিটি মারা যাওয়ার পর উদ্ধারকারী দলের পশু চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন ফেইসবুকে লিখেছেন, “…আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি… কিন্তু স্যরি।”
ভারতের আসাম থেকে গত ২৬ জুন বানের জলে ভেসে কুড়িগ্রাম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর চার জেলায় চষে বেড়ায় হাতিটি।
এক মাসের বেশি সময় ধরে পিছু পিছু ঘোরার পর গত ১১ অগাস্ট অচেতন করে ডাঙ্গায় তোলা হয় হাতিটিকে। পায়ে শিকল ও রশি দিয়ে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে শুরু হয় সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া।
পর্যাপ্ত খাবার, ঘুম ও সঙ্গীহীন অবস্থায় দুর্বল হয়ে পড়া বুনো হাতিটিকে সাফারি পার্কে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বন বিভাগের কর্মীরা। কিন্তু এরই মধ্যে রোববার সকালে হাতিটি শেকল ছিঁড়ে ছুট দিলে আবারও ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে অচেতন করা হয়।
পরে হুঁশ ফিরলেও অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। মঙ্গলবার ভোরে কয়রা গ্রামের বাদা বিলে বঙ্গবাহাদুর মারা যায়।
গত পাঁচ দিনে হাতিটিকে সুস্থ করে তুলতে উদ্ধারকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া কয়রা গ্রামের মানুষ বঙ্গবাহাদুরের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মীদের অবহেলার কারণেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
‘বঙ্গবাহাদুরের’ মৃত্যুকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলেছেন উপ প্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে, যিনি অবসরোত্তর ছুটির মধ্যেও দিনরাত সরিষাবাড়িতে পড়েছিলেন হাতিটি উদ্ধারের জন্য।
“বঙ্গবাহাদুরকে ভালোভাবে উদ্ধারের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে,” বলেন তিনি।
তপন কুমারের ধারণা, প্রতিকূল পরিবেশের কারণেই দুর্বল হাতিটি মারা গেছে।
“বুনো হাতিটির সেবার কমতি ছিল না। সব রকম চেষ্টা করেছি। গতরাতে এক মাহুতকে আঘাত করেছিল। তাকে জামপালপুর থেকে ময়মনসিংহে এনে সকালে অপারেশন করতে হয়েছে। এখন মাহুত শঙ্কামুক্ত। বুকের পাঁজর ভেঙে গেছে। আশা করি ভালোভাবে সেরে উঠবে।”
একই কথা বলেছেন পশু চিকিৎসক সৈয়দ হোসেন, যিনি প্রায় এক মাস হাতিটির পেছনে ছুটেছেন।
“আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। এখন আর কথা বলার শক্তি নেই।”
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে হোসেন বলেন, যেখানে বন্যাপিড়ীত লোকজন খাবারের সঙ্কটে ভুগেছে, তখনও হাতিটির জন্য দূর-দূরান্ত থেকে কলাগাছ ও প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করা হয়েছে।
“তাকে ভালোভাবে সরানোর সব প্রস্তুতি রাখা ছিল। কারও ক্ষতি করেনি সে, এলাকাসী ও উদ্ধারকারী দলসহ সবার ভালোবাসা পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত আর পারা গেল না।”
তিনি জানান, টানা কাজ করতে গিয়ে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরাও হাতিটির মত দুর্বল হয়ে পড়েছেন, কিন্তু বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালোবাসার টানেই তারা নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন।