দুই দফায় ১৯ দিন জামালপুরে থাকার পর ‘বঙ্গবাহাদুর’ নাম পাওয়া ভারতীয় বুনো হাতিটি যেভাবে মারা গেছে, তা মানতে পারছে না এলাকাবাসী।
Published : 16 Aug 2016, 01:43 PM
সেই হাতি উদ্ধারে আসছে ভারতীয় প্রতিনিধি দল
ভারতের সেই হাতি এখনও সিরাজগঞ্জে, পাহারায় ৫ পুলিশ
ভারতের আসাম থেকে বানের জলে ভেসে আসার পর তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছিল। সেই চেষ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার সকাল ৭টায় সরিষাবাড়ি উপজেলার কয়রা গ্রামে মারা যায় বঙ্গবাহাদুর।
ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত এই বুনো হাতিটিকে ঘিরে এলাকাবাসীকে মন খারাপ করতে দেখা গেছে।
গ্রামের মো. বরকত উল্লাহ হাজি বলেন, হাতিটি আতঙ্কের কারণ হলেও এলাকাবাসী তাকে উৎপাত করেনি। বরং খাবার দেওয়ার পাশাপাশি বন্যার পানি থেকে রক্ষা করেছে। সরকারি উদ্ধারকারী দলেরও প্রধান সহায় ছিল এলাকাবাসী।
“আমার দুই বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তাতে আমার দুঃখ নাই। কিন্তু একদল সরকারি লোক হাতিটাকে বাঁচাতে পারল না। এটা দুঃখজনক।”
সরকারি উদ্ধারকারী দলের লোকজনের গাফিলতির কারণে হাতিটা মারা গেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।”
একই গ্রামের গৃহিণী ছাহেরা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যখন ভাবছিলাম হাতিটা সুন্দরভাবে তার বনে ফিরে যাবে তখন তার মৃত্যু হল। এটা মানা যায় না। তাকে তার বনে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সবাই কত চেষ্টা করল, অথচ সে মরে গেল।”
ছাহেরার অভিযোগ, “হাতিটাকে ঠিকমতো খাবার দেয়নি ব্যাটারা। কয়েকটি করে আখ দেওয়া হত। দুই-একটা কলাগাছ। এই খেয়ে কি অত বড় প্রাণীটার জান বাঁচে।”
বন বিভাগের লোকজনের অবহেলায় হাতিটা মারা গেছে বলে তিনি মনে করছেন।
গ্রামের কৃষক মো. আলমগীর হোসেন বলছেন, আমরা সব সময় হাতিটাকে চোখে চোখে রাখতাম। এলাকার সবাই তাকে ভালবাসত। কিন্তু হঠাৎ করে তার মৃত্যু হল। এটা কিছুতেই মানা যায় না।
এই মৃত্যুর জন্য তিনি সরকারি উদ্ধারকারীদের দায়ী করেন।
“রোববার শেকল ছিঁড়ে ছুট দিলে হাতিটিকে অজ্ঞান করা হয়। পরে তার জ্ঞান ফিরলেও সোমবার বেলা ১১টা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় এক ফুট পানির মধ্যে সারাদিন পড়ে থাকে। পানির মধ্যেও তার গা পুড়ে যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় তাকে টেনেহিঁচঢ়ে তুলে কাদার মধ্যে ফেলে রাখা হয়। সরকারি লোকজন কিছু করতে পারে নাই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাতিটির শক্তি সম্পর্কে উদ্ধারকারীদের যথেষ্ট ধারণা ছিল না। তারা বুঝতে পারেনি কেমন শেকল দিয়ে হাতিটিকে বাঁধতে হবে।
হাতিটি ডাঙ্গায় থাকতে চাইত না। সব সময় পানিতে যাওয়ার লোভ ছিল তার। এ বিষয়টিতেও উদ্ধারকারীরা যথাযথ নজর দেয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
ভারতের আসাম থেকে গত ২৬ জুন বানের জলে ভেসে কুড়িগ্রাম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর কয়েকটি জেলা চষে বেড়ায় বঙ্গবাহাদুর। ১৩ জুলাই গাইবান্ধা হয়ে এসে জামালপুরে ২ দিন কাটানোর পর বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ ঘুরে ৩১ জুলাই আবার জামালপুরে ফিরে আসে। তারপর সে জামালপুরেই ছিল।