ভারত থেকে ভেসে আসা বুনো হাতিটি তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলে চার জেলা ঘুরলেও একে ধরতে পারেনি বন বিভাগ।
Published : 19 Jul 2016, 10:00 PM
কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া হয়ে এখন সিরাজগঞ্জের চরে হাতিটি রয়েছে।
হাতির বিষয়টি ভারত সরকারকেও জানানো হয়েছে। সেখান থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দলও আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, চরাঞ্চল থেকে হাতিটি উদ্ধার করে আনা বেশ কষ্টসাধ্য। সেক্ষেত্রে জনগণ যাতে হাতিটিকে বিরক্ত না করে এবং হাতিও যেন কারও ক্ষতি করতে না পারে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
এখন হাতিটি কোথায় যায় তার মর্জির অপেক্ষায় রয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) অসিত রঞ্জন পাল মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে হাতিটি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মনছুর নহর চরে রয়েছে। সেখানে বিজিবি, দমকলবাহিনী ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন।
তিনি বলেন, “হাতিটি সুস্থ রয়েছে। সুবিধাজনক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা। ৫ টন ওজনের এ হাতিটি উদ্ধার করে আনাও বেশ কষ্ট সাধ্য। আরও কিছুদর অতিক্রম করলে পরবর্তী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় আমরা ভাবব।”
তবে এ মুহূর্তে হাতিটিকে বিরক্ত না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।
“এটা বন্যহাতি। কুড়িগ্রাম হয়ে দীর্ঘসময় পার করে এখন সিরাজগঞ্জে পৌঁছেছে। এ সময়ে হাতিটি কারও কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু ওকে ডিস্টার্ব করলে ক্ষতি করবে। এখন লোকজনকে বলা হচ্ছে যাতে কোনো ডিস্টার্ব করা না হয়।”
কোনোভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হলে হাতিটিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানান অসিত পাল।
গত ২৬ জুন বুনো এই হাতিটি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নম্বর ১০৫২-এর কাছ দিয়ে বানের জলে ভেসে বাংলাদেশে আসে।
ভারতের আসাম রাজ্যের শিশুমারা পাহাড়ি এলাকা থেকে এই হাতি বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রৌমারী সীমান্ত দিয়ে আসা হাতিটি কয়েক দফা অবস্থান পরিবর্তনের পর ব্রহ্মপুত্র নদের বাগুয়ার চরের কাদায় আটকা পড়ে। সেখানে দুদিন আটকে থাকার পর নিজের চেষ্টায় মুক্ত হয়ে নয়ারচর কাশবনে যায়। পরে জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে গিয়ে অবস্থান নেয়। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের চরে পৌঁছে হাতিটি।
হাতিটি বাংলাদেশে আসার পথ তুলে ধরে বন্যপ্রাণী অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক সাহাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে হাতি আসা নিয়মিত ঘটনা। তবে এ হাতিটি এসেছে ভিন্নভাবে।
“ভারি বর্ষণে ব্রহ্মপুত্রের পানির স্রোতে কুড়িগ্রামের রৌমারী দিয়ে ঢুকে সে। এরপর গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জে এখন হাতিটি। প্রতিদিন জায়গা বদল করে যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আবার সরিষাবাড়ির দিকে যেতে পারে সে।”
এ অবস্থায় হাতিটি উদ্ধার করা বেশ কষ্টসাধ্য বলে মনে করেন তিনি।
এ বন কর্মকর্তা জানান, হাতি ভেসে আসার বিষয়টি ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে এবং হাতিটি ফিরিয়ে নিতেও তাদের বলা হয়েছে।
“আমরা নয়া দিল্লি ও আসাম বন বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি। ভারত থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসার কথা রয়েছে। ওই টিমের আসা-যাওয়ায় ভিসা, নিরাপত্তাসহ অন্যান্য কাজ সারতে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও বনবিভাগ কাজ করছে।”
শিগগির ভারতীয় দলটি বাংলাদেশে আসবে বলে আশা রাখেন সাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, “তাকে ধরতে গেলে বা উদ্ধার কার্যক্রমে ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করলে মারাও যেতে পারে। নৌকা করে উদ্ধার করাও জটিল। সব কিছু বিবেচনায় নিতে কাজ করতে হচ্ছে।”
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এলেও আপাতত হাতির ইচ্ছের উপরই ছেড়ে দিয়েছে ভাগ্য।
উপ বন সংরক্ষক সাহাব উদ্দিন বলেন, “হাতিটি ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাদের প্রতিনিধি দল এলে নিয়ে যাবে। উদ্ধারের আগে এখন শুধু অপেক্ষা। হাতিটি কোথায় যায় তার মর্জির অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’র সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ইসরাইল হোসেন বাবু জানান, পানিতে ভেসে আসা বন্যহাতিটি এখন কাজিপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান করছে। তাকে উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
কাজিপুর থানার ওসি সুমিত কুমার কুন্ডু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকালে হাতিটি কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি ও ছিন্নাবাড়ি এলাকার চরাঞ্চলে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে কাজিপুর থানার উপ-পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সিরাজগঞ্জ-বগুড়ার সীমান্তবর্তী একটি ছোট খাল সাঁতরে বন্যহাতিটি ভোরে একটি কাশবনে অবস্থান নেয়। ওই চরের চারিদিকে নদী। হাতিটি চরের এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছে।
“আমরা দূর থেকে হাতিটি শুধু দেখছি। কিছু করতে পারছি না। কোনো কিছু করার অবস্থা নেই। হাতিটি যাতে লোকালয়ে ঢুকে লোকজন ও বাড়িঘরের কোন ক্ষতি করতে না পারে আমরা মূলত সেই দিকটা গুরুত্ব দিচ্ছি।”