আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা ইউএসএআইডি কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে যে খবর এসেছে, তার সত্যতা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় যুক্তরাষ্ট্র।
Published : 27 Apr 2016, 02:09 PM
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ মুখপাত্র মার্ক টোনার মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো কারণ এখনো আমরা পাইনি।”
সোমবার বিকালে কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায় বাসায় ঢুকে জুলহাজ ও তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ পরদিন জানায়, একিউআইএস এক টুইটে এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
একিউআইএসের কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র মুফতি আব্দুল্লাহ আশরাফের নামে ওই টুইটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সমকামিতা প্রসারে’ কাজ করায় ‘মুজাহিদিনরা’ ওই দুজনকে হত্যা করেছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অ্যাসিসটেন্ট জুলহাজ সমকামী অধিকার বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। আর তার বন্ধু তনয় লোকনাট্য দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
“এটাই যে তাদের হত্যার কারণ নয়, এটা মনে করার কোনো কারণও আমরা দেখছি না,” বলেন মার্ক টোনার।
গত দুই বছর ধরে একের পর এক ব্লগার, লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ধর্মীয় ভিন্নমতাবলম্বী খুন হওয়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় সমকামী অধিকার কর্মী খুন হওয়ার এই খবর নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচনা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি এ হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এসব হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিটি ক্ষেত্রে আইএস বা আল কায়েদার নামে দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে। তবে সরকার বলে আসছে, বাংলাদেশে ওই ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি দলের কার্যক্রম নেই; এসব হত্যা স্থানীয় উপ্রপন্থি দলের কাজ।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে সাম্প্রতিক এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার সরকারের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসেন।
ওই বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার সবগুলোরই নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু (দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা) জুলহাজের ঘটনাটি ব্যক্তিগত বিষয়ও বটে।”
এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলেও জানান বার্নিকাট।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতি
জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বি তনয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইইউ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে একটি মৌলিক অধিকার বিবেচনা করে তা রক্ষায় কাজ করবে বলেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশা করে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।
নিহত দুজনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতিতে।