বহুল আলোচিত হল-মার্ক ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
Published : 10 Apr 2016, 10:26 PM
একই সঙ্গে ঋণ জালিয়াতির অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে কমিটি।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ২ নম্বর উপ-কমিটি বৈঠকে এ সুপারিশ আসে।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন কারারুদ্ধ আছেন এবং কয়েকজন পলাতক। একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন।
“তারা যে অপরাধ করেছেন তাতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রচলিত আইনে যদি যথেষ্ট পরিমাণে শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে কমিটি।”
কমিটি যত দ্রুত সম্ভব ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে বলেও জানান তিনি।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২ সালের অগাস্টে আর্থিক খাতে বড় এই কেলেঙ্কারির ঘটনার অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ওইবছর ৪ অক্টোবরে ১১টি মামলা করা হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর হল-মার্ক গ্রুপের পরিচালক তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক তুষারসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) হোটেল শাখা থেকে হল-মার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা
সংসদীয় উপ-কমিটি হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের কাছে মর্টগেজকৃত সম্পত্তি নিলাম করে অর্থ আদায়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনেরও সুপারিশ করেছে কমিটি।
অভিযুক্ত ১০ কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জনের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের ( দুদকের) মামলায় অভিযুক্ত।
শুধু সবিতা সিরাজের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার হওয়ায় এবং তার অনিয়ম তদন্তে গঠিত তদন্ত দলের প্রতিবেদনে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়নি। তাছাড়া দুদকের চূড়ান্ত চার্জশিটে তার নাম অর্ন্তভুক্ত না করার তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
এছাড়া সফিজ উদ্দীন আহমেদকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে নামিয়ে এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) করা হয়েছে। তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত আছেন। অর্থ আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে মানিস্যুটের মামলা করা হয়েছে।
এজিএম এজাজ আহমেদ বর্তমানে কারারুদ্ধ। গত ৩০ নভেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এজিএম সাইফুল হাসান বর্তমানে পলাতক। তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। এজিএম কামরুল হোসেন খানও পলাতক রয়েছেন। তাকে সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে নামিয়ে দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেরুন্নেছা মেরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল মতিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে পলাতক।
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ম্যানেজার একেএম আজিজুর রহমান (ঘটনার সময় ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখার প্রধান) জেল হাজতে থাকাকালীন মারা যান।
এছাড়া হোটেল শেরাটন শাখায় সংঘঠিত অনিয়মের সঙ্গে জড়িত জেনারেল ম্যানেজার ননী গোপাল নাথ পলাতক আছেন। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা রয়েছে।
জেনারেল ম্যানেজার মীর মহিদুর রহমান বতর্মানে কারারুদ্ধ। তার বিরুদ্ধে মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধেও মানি স্যুটের মামলা করা হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে কারারুদ্ধ।
এদিকে সংসদীয় উপ-কমিটি হলমার্কের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত দলিলগুলো মামলা করে দ্রুত ‘এ্যাটাচমেন্ট’ করার সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হল-মার্ক গ্রুপের ৭ হাজার ৬২৯ দশমিক ২১ শতাংশ এবং টি এ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপসহ অন্যান্য ৪টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫২৫ দশমিক ৩০৬ শতাংশ সম্পত্তি ব্যাংকের অনুকূলে মর্টগেজ নেওয়ার জন্য সম্পত্তির দলিলাদির সত্যায়িত কপি শাখার হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ওই সম্পত্তির মধ্যে ১ হাজার ২৬৯ দশমিক ৩০৬ শতাংশ সম্পত্তি ব্যাংকের দায়ের করা মানি স্যুটের মামলায় এ্যাটাচমেন্টের জন্য ২০১৪ সালের আগস্টে আর্জিভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২৫৬ শতাংশ সম্পত্তির বায়না মূলে মালিক থাকায় আইনজীবীর পরার্মশে মামলায় আর্জিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ওই মামলাগুলো বর্তমানে বিচারাধীন।
কমিটির আহ্বায়ক ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, এ বি তাজুল ইসলাম এবং শেখ ফজলে নূর তাপস অংশ নেন।