‘মা’ হিসাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আগামী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে প্রশাসনের নারী কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 13 Feb 2016, 06:43 PM
বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের পাঁচ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “মা হয়ে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য যেন সুন্দর ভবিষ্যৎ দিয়ে যেতে পারি।”
শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুব রহমানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “অন্তত মৃত্যুর পর বাবার সাথে যদি দেখা হয় তখন যেন বলতে পারি, আপনার প্রিয় মানুষগুলোর জন্য এগুলো করে এসেছি।”
বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন নিকটাত্মীয়কে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট হারানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এই অবস্থায় কোনো মানুষ সুস্থ হয়ে দায়িত্ব পালন.. এটা সকলে পারে না।
“ক্ষমতা আমাকে কিছুই দেবে না। ক্ষমতা একটা সুযোগ- দেশের মানুষের সেবা করার, কল্যাণ করার।”
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দ্রুত শেষ করতে কর্মকর্তাদের তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী।
দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা একদিকে উন্নয়নের, আরেকদিকে দুর্যোগ মোকাবেলার রোল মডেল।
“আমরা দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়তে চাই, যেন আর ক্ষুধার্ত-বুভুক্ষু না থাকে।”
তৃণমূলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু শহরভিত্তিক নয়, উন্নয়ন তৃণমূল পর্যন্ত করতে হবে। তৃণমূল পর্যন্ত ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
“জনগণের উন্নয়ন না হলে সকল কষ্টই বৃথা যাবে।”
বক্তব্যের শুরুতেই সবাইকে পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ফাগুন মাস আসলেই আমাদের মনটা একটু রোমান্টিক হয়ে যায়।
“হলুদ শাড়ি- লাল পাড়, হাতে ফুল নিয়ে চলে বেড়াচ্ছে। এটাই তো বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।”
এ সময় ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই নারীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে, কোথাও পিছিয়ে থাকেনি।”
বিভিন্ন অর্জনে নারীর অবদান থাকলেও তাদের প্রতি বৈষম্য চলে আসায় অসন্তোষ ঝরে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে: “অর্জনেও নারীর অবদান থাকে। আবার বৈষম্যের শিকারও হয় নারীরা।”
নারী বৈষম্যের বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক জনসচেতনতা গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি।
ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই পরিবর্তনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারেন সেজন্য প্রশাসনের নারী কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে বলেন সরকার প্রধান।
তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাত বছরে হওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “নারী সদস্যদের যে দায়িত্ব নিয়েছি, তা তারা চমৎকারভাবে পালন করেছে।”
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতেও নারী সদস্যরা ‘চমৎকারভাবে’ দায়িত্ব পালন করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
মেয়েদের পাশাপাশি পুরুষদেরও সংসারের কাজের ভাগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি: “সংসারে স্বামী-স্ত্রী একসাথে কাজ করলে অনেক সময় বেঁচে যায়, সন্তানদেরও সময় দেওয়া যায়।”
তার রান্না করা নিয়ে আলোচনা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি রান্না করছি শুনলে অবাক হয়ে যায়। আমি তো মা। আমার ছেলে-মেয়েরা আমার রান্না পছন্দ করে। আমি রান্না করে তাদের মুখে তুলে দেব- সেটাই তো আনন্দ।”
নাতি-নাতনিদের ইচ্ছা পুরণেও রান্নাঘরে যাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মেয়ের আট বছরের ছেলে দাদার পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে এসে বলে, ‘মজা করে রান্না করবা’। আমি এতো নার্ভাস কখনো হইনি। আমার মেয়ে পর্যন্ত বলেছে, ‘তোমাকে কখনো এতো নার্ভাস দেখিনি’। রান্নার পর নাতিকে বললাম, ভাইয়া কেমন হয়েছে? বললো, ‘বেশি মজা হয়েছে’।”
বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বক্তব্য রাখেন।
সংগঠনের মহাসচিব স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আক্তার স্বাগত বক্তব্য দেন। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ফাতেমা বেগমও বক্তব্য রাখেন।