আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
Published : 09 Jan 2024, 03:55 PM
ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু অথবা কোনো ক্ষতি ‘মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে মনে করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
রাজধানীর একটি হাসপাতালে খতনা করাতে এসে পাঁচ বছরের শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার পর স্বপ্রণোদিত হয়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কমিশন।
ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
সোমবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিশু আয়ানের মৃত্যৃর খবর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। শিশুটির বাবা অভিযোগ করেছে, খতনা করার সময় আংশিক অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া করার কথা। কিন্তু আয়ানকে পুরো অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছে। এজন্য হাসপাতাল কোনো অনুমতিও নেয়নি।”
কমিশন বলছে, “সুন্নতে খতনার ঘটনায় পরিবারের বিনা অনুমতিতে ভুক্তভোগী শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ এবং এর ফলে উক্ত শিশুর মৃত্যু ঘটার বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। কমিশন মনে করে চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
চিঠিতে বলা হয়, “এ অভিযোগের নিবিড় তদন্তপূর্বক সত্যতা যাচাই করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি এবং একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায় করা আবশ্যক। এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়টি অনতিবিলম্বে কমিশনে প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে বলা হলো।”
গত ৩১ ডিসেম্বর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করানোর জন্য আনা হয় আয়ানকে। সেদিন বেলা ৯টায় খতনা করার জন্য তাকে পুরোপুরি অজ্ঞান করা হয়।
খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট
খতনার জন্য অচেতন করা শিশু আয়ান আর ফিরল না
খতনা করার পর ১১টায়ও জ্ঞান না ফিরলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফসাপোর্টে রাখা হয় আয়ানকে।
রোববার রাতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে দেওয়া আয়ানের মৃত্যু সনদে ‘কার্ডিও-রেসপিরেটরি ফেইলিওর, মাল্টিঅর্গান ফেইলিওর এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ কে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখান হয়েছে।
এদিকে, আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেখানকার দুই জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার পরিবার। এছাড়া এ ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট করেছেন এক আইনজীবী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে সোমবার চার সদস্যের একটি কমিটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
ওই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার একজন সহকারী পরিচালক কমিটিতে আছেন।
চিকিৎসক মঈনুল আহসান বলেন, “কমিটি এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বুধবার তারা ঘটনাস্থলে যাবেন। সবার সঙ্গে কথা বলবেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দিবেন। প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে আসলে কি ঘটনা ঘটেছিল।”