“কারও পরিচয়, ধর্ম বা বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে থেকে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে স্বীকৃত হতে হবে।”
Published : 14 Oct 2024, 09:21 PM
বাংলাদেশে একটি মণ্ডপে হামলা এবং আরেকটি থেকে মুকুট চুরির ঘটনাকে ‘কঠোরভাবে নিন্দার যোগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করে ভারত সরকার যে বিবৃতি দিয়েছে, তার বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন ও অযাচিত’ বলে মনে করছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রতিবেশী দেশের ওই বক্তব্যের পাল্টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “বাংলাদেশে সব নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব।
“কারও পরিচয়, ধর্ম বা বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে থেকে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে স্বীকৃত হতে হবে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “১২ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের একটি বিবৃতি সরকারের নজরে এসেছে। যেখানে ‘বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দু ও সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং তাদের উপাসনালয়গুলোর সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশেষত এই শুভ উৎসবের সময়ে’।
“বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, “….মন্দির ও দেব-দেবীর অবমাননা ও ক্ষয়ক্ষতি একটি সুপরিকল্পিত ধারার অংশ…।” বাংলাদেশ সরকার মনে করছে এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অযাচিত বক্তব্য।”
বাংলাদেশ সরকার বলছে, ‘কিছু ঘটনা ঘটার’ তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে সরকার ‘দ্রুততার সঙ্গে’ উৎসবের এই সময়ে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
“সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাংলাদেশের উদারনীতি ও গণতেন্ত্রর দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ট্য, যা সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলছে, কেউ যে কোনো বিশ্বাস বা ধর্মেই বিশ্বাসী হোক কেন, এখানে কোনো বাধা ছাড়াই প্রত্যেকের ধর্মীয় রীতি ও চর্চার প্রতিষ্ঠা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পালনের অধিকার রয়েছে।”
সারা বাংলাদেশে ৩২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপে ‘স্বতঃস্ফুর্ত’ ও ‘শান্তিপূর্ণ’ভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে তা ‘প্রমাণিত হয়েছে’ বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য।
যশোরেশ্বরী মন্দিরের মুকুট চুরির বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দৈনন্দিন পূজাঅর্চনা করেছেন। সেই সময় পর্যন্ত মন্দিরের ভেতরে মুকুটটি অক্ষত ছিল।
“পুরোহিত ও মন্দিরের কর্মীরা এমন মূল্যবান সম্পদ কেন প্রহরা-ছাড়া এবং অরক্ষিত রেখে গেছেন, তা নির্ধারণের জন্য তদন্ত চলছে। চুরির ঘটনায় ইতোমধ্যে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপহার হিসেবে দেওয়া প্রতিমার মাথার স্বর্ণের মুকুটটি চুরি হয় গত বৃহস্পতিবার।
সেই খবরে উদ্বেগ জানিয়ে পরদিন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “চুরির তদন্ত, মুকুট উদ্ধার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”
সাতক্ষীরার পুলিশ অবশ্য বলছে, মুকুট চুরির ঘটনার সঙ্গে দুর্গাপূজার কোনো ‘সম্পর্ক নেই’। দীর্ঘদিন ধরে ওই মন্দিরে স্থানীয় দুটি পক্ষের ‘বিরোধ রয়েছে’। একটি শ্রেণি ওই মন্দির নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র করছে’।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশ্বস্ত করছে যে, বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের ধর্মনিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিচিত অক্ষুণ্ন রাখতে সরকার সর্বোচ্চটা করে যাচ্ছে।”