ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংবাদ সম্মেলনে মোট পাঁচটি কারণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ যত্রতত্র পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ফেলায় নিষ্কাশন নালা বন্ধ হচ্ছে।
Published : 13 Jul 2024, 09:32 PM
কম সময়ে অনেক বেশি বৃষ্টির পাশাপাশি শুক্রবারের বৃষ্টিতে ঢাকার বিরাট অংশে দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসীকে দায়ী করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি।
ভোগান্তির পর দিন শনিবার নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জলজটের জন্য মোটা দাগে পাঁচটি কারণের কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এই বৃষ্টি স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে অনেক বেশি।
“একই সঙ্গে আমরা দেখেছি, নর্দমাগুলোর ৫০ ফুট অন্তর অন্তর যে ক্যাচপিট রয়েছে সেগুলো ঠিকমত পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না। নগরবাসী অভ্যাসগত কারণে যত্রতত্র পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ফেলছে। বৃষ্টি হলে সেগুলো ক্যাচপিটে গিয়ে জমা হয়। আমরা লোকবল দিয়ে একদিকে পরিষ্কার করছি আবার অন্যদিকে সেগুলো আটকে যাচ্ছে। ফলে, পানি সরতে দেরি হয়েছে।"
“নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার চারপাশের স্লুইস গেটগুলোও সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে পারেনি। এটিও এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ”, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার তুলে ধরা তৃতীয় কারণ ছিল এটি।
এর বাইরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলার কারণে হাতিরঝিলের পানি ধারণের সক্ষমতা কমে যাওয়া, পিলখানার ভেতর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথাও তুলে ধরেন মিজানুর।
শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার ঢাকায় ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ২৫৫ মিলিমিটার। এর আগে ২০০৯ সালে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে।
প্রতিবার এমন জলাবদ্ধতা দেখা গেছে, তবে এবারের চিত্রটা আরও বেশি খারাপ।
দুপুরের আগেই কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরে মাজার রোড, এলিফেন্ট রোড, মৎস্য ভবন, সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে পানি জমে যায়।
কারওয়ান বাজার, ফার্মগেইট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়া, মহাখালীরও বড় এলাকা তলিয়ে ছিল।
শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর সড়কে পানি উঠে যায়।
পানিতে তলিয়ে যায় দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুরের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখাড়া, রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নীচু এলাকাও।
মহাখালী দক্ষিণ পাড়াতেও বিকালে ছিল কোমরপানি। এই এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বাসা বাড়তেও পানি ঢুকে যায়।
কিছু এলাকা তলিয়ে ছিল রাতেও এমনকি পরের দিন সকালেও জলজট।
দীর্ঘ সময় পানি সরতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “পানি সরে যাওয়ার জন্য স্লুইস গেটগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ২০২১ সালে ৫৫টি স্লইস গেইট ও রেগুলেটর পেয়েছি। এর মধ্যে ৩৭টি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এবং বাকি ১৮টি কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত। আমরা সব স্লুইস গেট সচল করেছি। কিন্তু সারাদেশে অতিবৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা শহর ঘিরে চারপাশের যে নদ-নদীগুলো রয়েছে সেগুলোর পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্লুইস গেট দিয়ে সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না।”
নিউ মার্কেট, কলাবাগান,কাঁঠালবাগান ও গ্রিন রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসি ।
ধোলাইখাল ও কমলাপুর পানির পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমাদের কমলাপুরের টিটি পাড়া ও ধোলাইখাল পাম্প স্টেশনের ছোট-বড় ৭টি পাম্প মেশিন পানি নিষ্কাশন করছে। শুধু ধোলাইখাল ও টিটি পাড়া পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টা হতে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত সময়ে ১৪৩ কোটি ৫৫ লক্ষ লিটার পানি অপসারণ করা হয়েছে।"
নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকা এবং কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও গ্রিন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে জানিয়ে মিজানুর বলেন, "নিউমার্কেট এলাকায় পানি নিষ্কাশনের আউটলেট নিরাপত্তাজনিত কারণে বিজিবি বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে নতুন করে নর্দমা লাইন স্থাপনে অনাপত্তি পেয়েছি। সেটির দরপত্র শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
“সেটি সম্পন্ন হলে নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তাছাড়া গ্রিন রোড, কলাবাগানসহ সংলগ্ন এলাকার পানি হাতিরঝিল হয়ে নিষ্কাশিত হয়।"
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিল দিয়ে নিষ্কাশন সক্ষমতা অনেক কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সুরাহা দেওয়া সম্ভব হবে না।"
করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো খায়রুল বাকের, নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।