“এটা আমার প্রথম চাকরির পরীক্ষা ছিল। ব্যাংকেও হয়েছিল, কিন্তু ভাইভা দেইনি। আমাদের অপরাধ কী আমরা জানতে চাই,” বলেন প্রশাসন ক্যাডারে বাদ পড়া রিমা ইসলাম।
Published : 01 Jan 2025, 05:11 PM
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া প্রার্থীরা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে থেকে তারা সচিবালয়ে গিয়ে বাদ পড়ার কারণ জানতে চান। প্রজ্ঞাপনে তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছেন। দুপুরে প্রার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও তার দেখা না পেয়ে ফিরে এসেছে।
এই বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডারের ২ হাজার ১৬৩ পদে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি।
মৌখিক পরীক্ষার পর সুপারিশকৃতদের মধ্যে থেকে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগে গত ১৫ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগে দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতে প্রথম প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়ে ১৬৮ জন।
দুই প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ২৬৭ জনের মধ্যে প্রায় দুইশ জন বুধবার সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
বাদ পড়া প্রার্থীদের একজন অমলেশ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম প্রজ্ঞাপনে কৃষি ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন প্রজ্ঞাপনে নাম নেই। কেন নেই আমরা জানি না।”
প্রথম প্রজ্ঞাপনে সমবায় ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া সিফাত উল্লাহ তাসনিমও হাজির হয়েছেন সচিবালয়ের সমানে।
তিনি বলেন, “কেন বাদ পড়েছি তা জানতে সচিবালয়ের ফটকে অবস্থান করছি। প্রতিনিধি দল ভেতরে গিয়েছিল স্যারদের সঙ্গে কথা বলতে।”
দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া প্রশাসন ক্যাডারের প্রার্থী আরিফ বাদ পড়াদের প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে গিয়েছিলেন।
ফিরে এসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় নেই। তাই আমাদের আবেদনটাও রিসিভ করা হয়নি। বলা হচ্ছে সিনিয়র সচিবের সম্মতি ছাড়া আমাদের আবেদন নেওয়া হবে না। আমরা অপেক্ষায় আছি।”
শিক্ষা ক্যাডারে বাদ পড়া রাজু কুমার সরকার বলেন, “আমাদের কেন বাদ দেওয়া হয়েছে জানি না। এই সরকারের সময় ভেরিফিকেশন করে এই সরকারের সময়ই গেজেটেড হয়েছি।”
চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া তথ্য ক্যাডারের সাইয়েদ মো. ইরফান বলেন, “যদি আমার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখাতে পারেন, আমি চাকরিই দাবি করব না।”
রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও কেন বাদ পড়েছেন, সেটি জানেন না প্রশাসন ক্যাডারে বাদ পড়া রিমা ইসলাম।
তার ভাষ্য, “আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই। তবুও আমি বাদ। তারা কি ভেরিফিকেশন করলেন?
“এটা আমার প্রথম চাকরির পরীক্ষা ছিল। ব্যাংকেও হয়েছিল, কিন্তু ভাইভা দেইনি। আমাদের অপরাধ কী আমরা জানতে চাই।”
৪৩তম বিসিএসে নিয়োগে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. উজ্জল হোসেন।
প্রার্থীদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতনরা বলতে পারবেন।”
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেসুর রহমানের মোবাইল ফোনে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল, যাতে অংশ নিতে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জনের আবেদন জমা পড়ে। কোভিড মহামারির মধ্যে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী অংশ নেন।
এরপর ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-
৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের নতুন প্রজ্ঞাপন, এবার বাদ ১৬৮ জন
৪৩তম বিসিএস: অবশেষে ২ হাজার ৬৪ জনের নিয়োগ
৪৩তম বিসিএস: যোগদানের তারিখ পিছিয়ে ১ জানুয়ারি
৪৩তম বিসিএস: ক্যাডার ও নন–ক্যাডারে ২৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ
৪৩তম বিসিএস: অপেক্ষা ফুরাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর
৪৩তম বিসিএস: ক্যাডার ও নন–ক্যাডারে ২৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ